সুন্দরবনের বুক চিরে বয়ে চলা শ্যালা নদীর পানি ঢেকে গেছে কালো ফার্নেস ওয়েলে। যত দুর চোখ যায় নদীর পানি ডেকে আছে কালো তেলের আবারনে।
কোথাও কোথাও কালো তেলের আস্তারণ এতই বেশি যে নদীতে পানির অস্তিত বোঝা যায় না।
মঙ্গলবার ভোরে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ (সেভেন) ডুবে যাওয়ার পর থেকে জোয়র ভাটায় শ্যালা নদী এবং এর সাথে যুক্ত বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ছোট ছোট খাল গুলোতে বইছে কালো তেলের প্রবাহ।
দেশে দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা থেকে ছেড়ে আসা এবং এই রুটে চালাচল কারী দেশি-বিদেশি জাহাজ পর্যটক নিয়ে চলা লঞ্চ এবং ট্রল চলতে গিয়ে সৃষ্ঠ তুফানে নদীর দু’কুলে উপচে পড়ছে কালো তেলের আস্তারন। কোথাও কোথাও জমছে ফেনা।
জোয়ারে সময় এতে ঘেকে যাচ্ছে শাসমুলিয় (শিকড়) এ বনের গাছ-গাছালির মুল। বিশেষ করে নদীর দু’তীরে গোলপাতা, সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়াসহ অনান্য গাছের নিচের পাতা ও কান্ড গুলো কালো বর্ণের হয়ে গেছে।
সুন্দরবনের ভেতর বয়ে চলা এ নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ অবস্থা। ঝাজালো তেলের গন্ধ ও গ্যাসে এসব এলাকায় চলাচলের সময় চোখে পানি চলে আসছে।
ঘটনা স্থলে বসে দুর্ঘটনা কবলিত ট্যাঙ্কারের বেঁচে যাওয়া ইঞ্জিন চালক আবুল কালাম (৪৭) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জাননা, তেল নিয়ে গোপালগঞ্জের এটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তারা। পথে বনের এই এলাকায় ঘন কুয়াশার কারণে মধ্য রাতে দূর্ঘটনার আসঙ্কায় তারা জাহাজটি নোঙ্গর করে রাখে। ভোর ৪ টা, সাড়ে ৪টার দিকে অপর একটি তেলবাহী ট্যাংকার এমটি টোটাল তাদের ট্যাঙ্কারে ধাক্কা দেয়।
এতে জাহাজটির সমনের অংশ ডুবে যায়। এত জাহাজে থাকা ৭জন নাবিক ও ক্র’র মধ্যে ৪ জন নদীতে পড়ে যান। বাকি তিন জন জাহাজের পেছনের ভেষে থাকা অংশে কোন রকমে ধরে থাকেন।
পরে ডুবে যাওয়া ৪ জনের মধ্যে ৩জন সাত্রে তীরে উঠলেও জাহাজের মাস্টার মোকলেসকে (৫০) এখনও পাওয়া যায়নি।
বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেনে, মনে হচ্ছে জাহাজ থাকা সব তেল নদীতে ভেসে গেছে।
তিনি জানান, জাহাজটিতে ৩ লখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্ণেস অয়েল ছিলো। সব তেলই এখন নদীতে।
ডুবে যাওয়া তেলবাহী ট্যাঙ্করটির সুপার ভাইজার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, খুলনার পদ্মা ওয়েল কোং ডিপো থেকে গোপালগঞ্জের একটি পাওয়ার প্লান্টের এ জ্বালানি তেল নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা।
ট্যাংকারটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারুন এন্ড কোং এর ব্যাবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তাদের কম্পানির আরো দু’টি ট্যাঙ্কার ঘটনা স্থালে যাচ্ছে। তারা ডুবরি দল সব সকলকেই এ খবর জানান। তবে পরিদর্শন বাদে কেউ তেমন কোন সহযোগীতা করেন নি।
বনবিভাগ ও পরিবেশবিদরা মনে করছেন, সুন্দরবনের মঝে এ দুর্ঘটনার ফলে বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী-ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়বে। ব্যাপক ক্ষতি হবে এ বনের নদ-নদীতে থাকা বিপুল মৎস সম্পদের।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসেন চৌধরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তাদের দু’টি প্রতিনিধি দল ঘটনা স্থাল পরিদর্শন করেছেন। বনবিভাগের এই প্রতিনিধি দলের বরাত দিয়ে তিনি জানান, নদীতে প্রায় ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার এলাক জুড়ে এ তেল ছড়িয়ে পড়েছে।
এতে সুন্দরবনের জলজ জীববৈচিত্রে মারাত্মক ক্ষতির সঙ্কা তৈরি হয়েছে।