বাগেরহাটের ফকিরহাট থানায় কর্মরত এক সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ও দু’জন পুলিশ কনস্টেবলকে বুধবার ক্লোজ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা ফকিরহাট থানা পরিদর্শনকালে এই তিন জনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা ও গোপণ তথ্য ফাঁসের প্রমাণ পেয়ে তাদের ক্লোজ করার আদেশ দেন।
শাস্তিপ্রাপ্ত এই পুলিশ সদস্যরা হলেন এএসআই নাজমুল হোসেন, কনস্টেবল মহসীন আহম্মেদ ও কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন। তাদেরকে বাগেরহাট পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বাগেরহাট পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ফকিরহাট থানার একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার দুই সন্দেহভাজনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে শাস্তিপ্রাপ্তরা এমন কিছু গোপণীয়তা ফাঁস করেন যার ফলে পুলিশের তদন্ত পদ্ধতি বাধাগ্রস্থ এবং পুলিশ বিব্রত হয়। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের পক্ষ থেকে বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের কাছে ফকিরহাট থানা পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন, সোনার গহনা কেড়ে নেয়া ও ঘুষ দাবির অভিযোগ আনা হয়।
মঙ্গলবার রাতে এই অভিযোগ তদন্ত করতে যেয়ে পুলিশ সুপার ঐ তিন জনের সাথে গ্রেপ্তারকৃত দু’জনের সখ্যতার সূত্র খুঁজে পান। রাত নয়টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ সুপার ফকিরহাট থানায় অবস্থান করে এ সব বিষয় তদন্ত করেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ঐ দু’জন হলেন শাহাদাত ওরফে সোহেল পঞ্চায়েত (৩২) ও মো: ফারুক হাওলাদার (৩৪)। শাহাদাতের বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার বাদুড়া গ্রামে। ফারুকের বাড়ি একই উপজেলার চিত্রা গ্রামে।
পুলিশ জানায়, তাদের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর ও ফকিরহাট থানা এবং বরগুনা জেলায় অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অন্তত সাতটি মামলা আছে।
ঐ ডাকাতি মামলার এজাহার, স্থানীয় সূত্র, ফকিরহাট থানা ও আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লখপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে গত ২৬ নভেম্বর ভোররাতে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ছাব্বিশ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। পুলিশ এই মামলায় ২৮ নভেম্বর লখপুর গ্রামের হাকিম পটুয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া শাহাদাত ও ফারুককে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে।
পুলিশ ঐ বাড়ি থেকে তাদের ব্যবহৃত মটর সাইকেল ও শাহাদাতের স্ত্রীর ফাহিমা ওরফে রুমা বেগমের কিছু স্বর্ণালংকারও নিয়ে আসে। তিন রাত থানায় রেখে পুলিশ পহেলা ডিসেম্বর তাদের গ্রেপ্তার দেখায়। ২ ডিসেম্বর ঐ ডাকাতি মামলায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে পহেলা ডিসেম্বর রাতে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শাহাদাতের ভাড়া ঘরে থাকা চালের বস্তা থেকে লুকিয়ে রাখা পঞ্চাশ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
এদিকে শাহাদাতের স্ত্রী ১ নভেম্বর বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে বলেন যে, তার স্বামী ও দেবর মাছ ব্যবসায়ী। তারা পিরোজপুর থেকে মাছ এনে ঢাকায় পাঠান। পুলিশ তাদের হয়রানী করতে তিন দিন ধরে থানায় আটকে রেখেছে।
তিনি ফকিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমশের আলীসহ কয়েকজন দারোগার বিরুদ্ধে তাঁর স্বামী ও দেবরকে তিন দিন থানায় আটকে হয়রাণী, মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ দাবি এবং তাঁর শরীর থেকে স্বর্ণালংকার খুলে নেয়ার অভিযোগ করেন।
ফকিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সমশের আলী ফাহিমার এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, শাহাদাত ও ফারুক অপরাধী প্রকৃতির, বহু মামলার আসামী। তারা সহোদর না। শাহাদাতের স্ত্রী উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ সব অভিযোগ করেছেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঐ তিন পুলিশ সদস্যকে থানা থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তবে তাদের ক্লোজ করার কারণ তিনি জানেন না।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ৩ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করার সাথে ডাকাতির ঘটনার সম্পৃক্ততা নেই। শাহাদাতের স্ত্রীর অভিযোগগুলোর সত্যতা মেলেনি। পুলিশ ঐ বাড়ি থেকে তদন্তের স্বার্থে কিছু স্বর্ণালংকার ও মটর সাইকেল এনেছে যা প্রমাণ সাপেক্ষে ফেরৎ দেয়া হবে।