প্রায় পঞ্চাশের কোঠায় গৃহবধু নাছিমা। হাসপাতালের বিছানায় নিদারুণ কষ্টে ছটফট করছেন। শরীরে তার দগদগে ক্ষত। মাথায় বড় ব্যান্ডেজ।
ঠিকমত কথা বলতে পারছেন না। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রেফার্ড করলেও টাকার অভাবে স্থানীয় ক্লিনিকের এক কোণায় গত ৫দিন ধরে পড়ে রয়েছেন।
অসহায় এই বৃদ্ধার করুণ পরিণতির কারণ একটাই। তিনি এলাকার প্রভাবশালীদের লোকজনকে টাকা দাদন দিয়ে ছিলেন ব্যবসা করার জন্য। আর সেই টাকা চাইতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হন।
হামলাকারীরা ধাতব অস্ত্র দিয়ে তার মাথা থেতলে দিয়েছে। এছাড়া প্রকাশ্যে নগ্ন করে নাছিমার গোপন অঙ্গে বিষাক্ত দ্রব্য (কচুর ডগা) প্রবেশ করায় চক্রটি। ঘটনাটি ঘটেছে মংলার শহরতলীর সিগণ্যাল টাওয়ার এলাকায়।
বর্বর এই হামলার পর ভয়াবহ আহত নাছিমাকে পুলিশের সাহায্যে উদ্ধার করে মংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
মঙ্গলবার ক্লিনিকে সরেজমিনে গেলে নাছিমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিকট আত্মীয়রা এসব তথ্য জানান। নাছিমার চিকিৎসক ডা. সুদীপ বালা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন- নাছিমার মাথায় বড় ধরণের ক্ষত হয়েছে। এছাড়া তার শরীরের কোন উন্নতি হচ্ছে না। তাই তাকে খুলনায় রেফার্ড করা হয়েছে।
এদিকে’ ওই প্রভাবশালী মহল নাছিমাকে বেশ্যা অপবাদ দিয়ে গ্রাম ছাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
মঙ্গলবার মংলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নাছিমার বোনের মেয়ে ফাতেমা বেগম পুরো ঘটনা জানতে গিয়ে বলেন- আমার খালা নাসিমা বেগম (৪৮) পশুর নদীতে পোনা ধরে কোন মতে সংসার চালান। তার স্বামী দিনমজুর মো. রুহুল আমিন। কয়েক মাস আগে এলাকার নূর আলম, শহিদুল , আলী হোসেন, ইকবাল, রাজু, রানা, নাজমুল ও কামরুলকে কিছু টাকা ব্যবসা করার জন্য দাদন হিসাবে দেন খালা।
গত ২৮ নভেম্বর সকালে ওই টাকা চাইতে গেলে শহিদুল ও আলী হোসেন খালার উপর গাছ কাটা দা দিয়ে হামলা চালায়। হামলায় আমার খালার মাথা কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে । এই অবস্থায় আলী হোসেন প্রকাশ্যে খালাকে (নাছিমা) নগ্ন করে যৌনাঙ্গে কচু ঢুকিয়ে দেয়। খবর পেয়ে থানার এএসআই শফিকুল উদ্ধার করেন এবং মংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় খালাকে।
এদিকে, ওই মহলের সাথে এলাকার এক কাউন্সিলর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ফাতেমা বলেন “সন্ত্রাসী ওই মহলের এক সদস্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাদেরের আত্মীয় হওয়ায় আমাদেরকে এলাকার খারাপ মেয়ে হিসাবে দেখিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ভুয়া অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর কাদেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান- নাসিমা খারাপ মেয়ে তিনি শুনেছেন । তাই তিনি গণ স্বাক্ষরে সিগনেচার দিয়েছেন। খারাপ মেয়ে হলে তাকে মেরে হাসপাতালে পাঠাতে হবে এমন প্রশ্নে কোন সদউত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
এদিকে, অভিযুক্ত শহিদুল, আলী হোসেন, ও কামরুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- নাছিমাকে কেউ আহত করেন নি। সে নাটক সাজিয়েছেন এবং সে এলাকায় খারপ মহিলা হিসাবে পরিচিত।
মংলা থানার ওসি বেলায়েত হোসেন বলেন- এ ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাপরটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে বিষয়টি এমন পর্যায়ে গেছে যে স্থানীয় এমপি খালেক তালুকদার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন ।