অগ্রযাত্রার ৬৩ বছর পর করল মংলা বন্দর। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সমুদ্র বন্দর ৬৪ বছরে পা রাখছে সোমবার।
বন্দরের ৬৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী (মংলা বন্দর দিবস) উপলক্ষে এবার দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মংলা বন্দর কর্তিপক্ষ।
‘মংলা বন্দর দিবস’ উদ্যাপনে রবিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুরু হবে এসব আনুষ্ঠানিকতা।
মংলা বন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাকরুজ্জামান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টায় মংলা বন্দর প্রাঙ্গনে বন্দরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বর্ণাঢ্য র্যালী বের কারা হবে।
এর পর রীতি মেনে দুপুরে আয়োজন করা হয়েছে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবহারকারী এবং বিশিষ্ট জনদের সম্মানে প্রতি ভোজ বা বড়খানা’র। বিকাল সাড়ে ৩ টায় আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। যেখানে সংঙ্গীত পরিবেশন করবেন মমতাজ বেগমসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত শিল্পিবৃন্দ।
এসব অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, বন্দর কর্তপক্ষ এবং বন্দর ব্যবহারকারিসহ বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট জনদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে জানা তিনি।
এর আগে আজ (রোববার) সন্ধায় মিলাদ-দোয়া মাহাফিল একং রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে বন্দরে অবস্থান সকল দেশি-বিদেশি এবং বন্দরের নিজেস্ব জাহাজে ১ মিনিট হুইসেল বাজান হবে।
১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর ‘চালনা বন্দর’ নামে বাগেরহাটের মংলায় যাত্রা শুরু করে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর। ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটি বিদেশি জাহাজ নোঙরের জন্য উন্মুক্ত করা হলে ব্রিটিশ বণিক জাহাজ বন্দরে প্রথম নোঙ্গর করে।
মংলা বন্দর খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। প্রথমে এই বন্দর গড়ে ওঠে চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে।
সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে মংলা অধিকতর সুবিধাজনক হওয়ায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি চালনা থেকে মংলায় স্থানন্তর করা হয়। তখন মংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালনা নামেই পরিচিত ছিল।
পাকিস্থান আমলে মংলা বন্দরের প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয় ছিল খুলনা শহরে। পরবর্তী সময়ে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীরতা হারিয়ে ফেলে এ বন্দর। বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ করে দেওয়া হতো এবং প্রতিবারই খননের পর এটি আবার জাহাজ নোঙরের জন্য উন্মুক্ত করা হতো।
প্রতিষ্ঠার পর এটি প্রথমে ‘চালনা এঙ্কর’, পরবর্তিতে ১৯৭৮ সালে ‘চালনা পোর্ট কর্তিপক্ষ’ এবং সর্বশেষ ১৯৮৬ সাল থেকে ‘মংলা বন্দর কর্তিপক্ষ’ হিসাবে যাত্রা শুরু করে।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল প্রধান বন্দরের সাথে সংযোগ আছে মংলা সমুদ্র বন্দরের।
বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার শেহালাবুনিয়া মৌজায় পশুর নদী ও মংলা নদীর সংযোগস্থলে অবস্থান এই বন্দরের।
বন্দরে ১১টি জেটি, পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ রয়েছে। এছাড়া নদীর গভীরে রয়েছে ১২টি ভাসমান নোঙরস্থান। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে নাবিকদের জন্য একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে।
বন্দরটি বর্তমানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। পণ্য খালাসের জন্য ২২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারে। প্রতিবছর এই বন্দরে প্রায় ৪০০টি জাহাজ নোঙর করে এবং বছরে গড়ে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্যের আমদানি-রপ্তানি হয় এ বন্দর দিয়ে।
দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রসারে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মংলা বন্দর। সাম্প্রতি সময় মংলা বন্দরকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সম্ভাবনার।
ভারত ও নেপালের সাথে সরকারের চুক্তির ফলে এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত, নেপাল, ভূটানকে মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হবে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা মনে করেন, মাওয়ায় নির্মিনাধীন পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে মংলার। যা এ বন্দরের অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করবে।
মংলা বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া রোববার সন্ধায় বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, দির্ঘ্য দিন সরকারের লোকসানের প্রতিষ্ঠান হিসাবে মংলা পোর্ট চললেও সাম্প্রতি সময়ে আবারও লাভ করতে শুরু করেছে মংলা বন্দর। গত অর্থবছরে মংলা বন্দর প্রায় ৫০ কোটি টাকা আয় করেছে।
এ ধারাবাহিকতায় এবার লাভ আরো বেশি হবে বলে আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মংলা বন্দর ব্যবহারে সকলকে আরো উদ্ভুদ্ধ করতে এবং বন্দরের পজেটিভ ভাবমূর্তি সকলকে কাছে তুলে ধরতে এবার অনান্য বারের তুলোনায় বৃহত পরিসরে মংলা বন্দর দিবন উদ্যাপন করা হচ্ছে।