বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপন করা হলো দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলার ৬৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।
দিনটি উপলক্ষে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় মংলা বন্দরের প্রশাসনিক ভবন চত্ত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়।
নৌ পরিবহণ মন্ত্রনালয়ে সচিব শফিক আলম মেহেদি ও বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার নের্তৃত্বে র্যালীতে বন্দরের কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেয়। র্যালীটি বন্দরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবারও বন্দর ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
পরে সচিব শফিক আলম মেহেদির সভাপতিত্বে বন্দর ভবনের কনফারেন্স মিলনায়তনে সংক্ষিপ্ত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, মংলা বন্দর আবার ঘুরে দাড়িয়েছে। বেড়েছে জাহাজের আগমন।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, বন্দরের সদস্য (অর্থ) আব্দুল মান্নান, সদস্য (প্রকৌশল) এমদাদ হোসেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও পরিচালন (অপারেশন) আলতাফ হোসেন, হারবার মাস্টার কমান্ডার একেএম আকতারুজ্জামানসহ বন্দরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।
বন্দর চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে মংলা বন্দর দিয়ে গাড়ী আমদানি শুরুর পর থেকে ঘুরে দাড়ায় মংলা বন্দর। ২০০৯-১০ অর্থ বছর থেকে আবরও লাভের মূখ দেখতে শুরু করে মংলা বন্দর।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে মংলা বন্দরে জাহাজ আগমণ ও নির্গমন করেছে ৩৪৫টি। এই অর্থ বছরে বন্দর লাভ করে ৪৮ কোটি টাকা। মংলা বন্দরকে সরকারের এখন ভর্তুকি দিতে হয়না।
আগামী ২০২১ সালে এই বন্দর দিয়ে বছরে এক হাজার জাহাজের আগমণ নির্গমন ঘটবে এমটাই আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই পঞ্চাশোর্ধ বয়সী মংলা বন্দরকে আরও গতিশীল করতে সকলে একযোগে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
মতবিনিময় সভা শেষে দুপুরে আয়োজন করা হয় ঐহিত্যবাহী ‘বড়খানা’র (মধ্যাহ্নভোজ)। এতে অংশ নেন বাগেরহাট-৩ আসনের (মংলা-রামপাল) সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেকসহ বন্দরের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পরিবারের সকল সদস্য ও জনপ্রতিনিধিসহ প্রায় ছয় হাজার লোক।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকা ব্যায় করে।
বিকেল থেকে আয়োজন করা হয় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। স্থানীয় ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মমতাজের পরিবেশন রাত পর্যন্ত চলে এ আয়োজন।
তবে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এত বড় আয়োজন করা যুক্তিসঙ্গত কিনা এবং এতে করে বন্দরের সুনাম বাড়বে না কমবে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থা।
এ বিষযে জানতে চাইলে ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বন্দরের পরিচালন (অপারশেন) আলতাফ হোসেন বলেন, ‘অন্যান্য বারের তুলনায় আমাদের এবারের আয়োজন একটু ব্যাপক। এবার আমরা বন্দরের কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ প্রায় পাঁচ হাজার আমন্ত্রিতদের সপরিবারে আসার আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম। দুপুরের মধ্যাভোজে প্রায় পাঁচ সহস্রারাধিক লোক খেয়েছে।
এই ‘বড় খানার’ জন্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ১১ লক্ষ টাকা দিয়েছে’। তা দিয়ে খাওয়ার ব্যয় মেটানো হয়েছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভুইয়া বলেন, মংলা বন্দর লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। সরকারের ভিশন ২০২১ রুপকল্প বাস্তবে রুপ দিতে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিক রয়েছেন।
নতুন উদ্যম ও প্রেরণা নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই যাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে সে লক্ষেই এই ব্যাপক আয়োজন। বন্দর ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করার জন্যে বিভিন্ন রকম প্রনোদনামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্যে বন্দরের বিভিন্ন বরাদ্দ থাকে। সেখান থেকেই অনুষ্ঠানে ব্যয় করা হয়েছে।
গেট-তোরণসহ এমন ছোট-খাটো কিছু বিষয়ে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেছে জানালেও প্রতিষ্ঠা বর্ষিকী অনুষ্ঠানে সার্বিক কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।
তবে মংলা বন্দরের এত বড় আয়োজন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ক্যাপ্টেন রফিক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষে অবশ্যই আয়োজন করা উচিত। তবে নিজস্ব তহবিল থেকে এত ব্যয় করে অনুষ্ঠান করার মতো অবস্থায় আমরা আছি কি-না তা বিবেচনা করা উচিত ছিল।
কারও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বড় আয়োজন করলে তখন আর এ প্রশ্ন উঠতো না। আর অর্থের উৎসের বিষয়টি স্বচ্ছ থাকা উচিত।
প্রসঙ্গত: ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মংলা বন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। সেই থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ পহেলা ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা মংলা বন্দর দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।