বাগেরহাটের চিতলমারীতে শিক্ষকদের মারপিট, ভৎর্সনা ও স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়ার অপমানে এক স্কুল ছাত্র আত্মহত্যা করেছে বলে অভিয়োগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক মহল ও গ্রামবাসীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরবানিয়ারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র আশিষ বালা (১৪) রবিবার সকালে স্কুলে যায়। স্কুলে গিয়ে শ্রেণী কক্ষে গেলে সহকারী প্রধান শিক্ষক ক্ষিতিষ রায় তাকে ডেকে নিয়ে অফিস রুমের সামনে দাড়িয়ে রাখে।
পরে তাকে তিরস্কার করে স্কুল থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনার পর আশিষ দুপুর ১ টার সময় বাড়িতে ফিরে ঘরের আড়ায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
মৃত আশিষের বাবা আনন্দ বালা ও স্কুল শিক্ষক চাচা নিরঞ্জন বালা জানান, গত বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) ক্লাসে বসে আশিষ খাতায় একটি কবিতা লেখে। এ ঘটনার রেশ ধরে ওইদিন সহকারী প্রধান শিক্ষক ক্ষিতিষ রায় ও অন্য একজন প্রভাবশালী শিক্ষক তাকে মারধর করে স্কুল থেকে বের করে দেয়।
পরে শনিবার স্কুলে গেলে পুনরায় তাকে স্কুল থেকে ভৎর্সনা করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। শেষে রোববার আবারও স্কুলে গেলে তাকে রোদে দাঁড় করে রেখে পরে চড়-থাপ্পড় দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়। এ রকম দফায় দফায় মারপিট ও অপমান সইতে না পেরে আশিষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
চরবানিয়ারী সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য ভারতী মজুমদার জানান, স্থানীয় গ্রুপিংয়ের প্রতিহিংসায় এ স্কুল থেকে কারণে-অকারণে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, গত জুন মাসেও এই স্কুলে বসে মৃতিকা সমাদ্দার নামে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী আহত্মহত্যা করেছে।
চরবানিয়ারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেয়া শিক্ষার্থী ক্লিনটন ঘরামী, স্বাধীন বড়াল, অভিজিৎ মধু ও সবুজ ঢালী জানান, অভিভাবকদের সাথে দলীয় মত বিরোধের জন্য তাদেরসহ ১৭ জনকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি রায় স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
চিতলমারী উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল জানান, এ ধরনের ঘটনা স্কুলটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাই প্রশাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিৎ।
এব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, এ ধরনের কোন ঘটনার কথা তার জানা নেই।
চরবানিয়ারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পীযূষ কান্তি রায় স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের তাড়িয়ে দেয়ার কথা অস্বীকার করে জানান, নোংরা কবিতা লেখায় আশিষকে অভিভাবকদের নিয়ে স্কুলে আসতে বলা হয়েছিল।
এই তুচ্ছ বিষয়টিকে নিয়ে এলাকার একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে। স্কুল ছাত্র আশিষের মৃত্যুর ঘটনায় আজ (সোমবার) স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চিতলমারী থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর বাগেরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে ওই ছাত্রের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।