জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র নারী শাখার প্রধান ফাতেমা আক্তারের (২৫) বড়ী বাগেরহাটে।
ফাতেমা ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার আটক মূল সন্দেহভাজন জেএমবি জঙ্গি শেখ রহমাতুল্লাহ ওরফে সাজিদের স্ত্রী। তার বাড়ী জেলার মোল্লাহাট উপজেলায়।
বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার সাজিদ আটকের পর ভারত থেকে পালিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বাগেরহাটের মোল্লাহাটে চলে আসে তার স্ত্রী জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর নারী শাখা প্রধান ফাতেমা।
তিনি (ফাতেমা) বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার দ্বিগংগা গ্রামের রফিক শেখের মেয়ে।
রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে ফাতেমা বেগমসহ (২৫) চার জঙ্গিকে শনিবার (২২ নভেম্বর) রাতে ঢাকা সদরঘাট থেকে আটকের কথা জানায় পুলিশ।
পুলিশের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে শনিবার রাতে ফাতেমাকে আটকের কথা বলা হলেও ডিবি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবারই কয়েকটি পত্রিকার খবরে ওই নারীকে আটকের খবর জানানো হয়।
একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে কেরানীগঞ্জের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ফাতেমাকে আটক করে, যিনি গত ৮ নভেম্বর সাজিদের গ্রেপ্তারের পরপরই সন্তানসহ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং এক আত্মীয়র বাসায় আত্মগোপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেছিলেন, “ফাতেমা বর্ধমান বিস্ফোরণের পর ভারতের ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে ছিলেন। পরে তিনি পালিয়ে বাংলাদেশ আসেন।”
এদিকে ফাতেমার মায়ের দবি, পুলিশ এসে শিশু সন্তানসহ ফাতেমা ও তার বাবা রফিক শেখকে গত মঙ্গলবার নিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, ১০ বছর আগে নারায়নগঞ্জের ফরাজিকান্দা গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে (জেএমবি প্রধান) মোঃ মাসুম ওরফে সাজিদের সাথে বিয়ে হয় ফাতেমার।
বিয়ের দু’বছর পর গোপালগঞ্জের একটি মামলায় আটক হয়ে ৭ বছর কারাগারে থাকে সাজিদ। কারাগার থেকে দুই বছর আগে ছাড়া পেয়ে ফাতেমা ও এক সন্তানকে নিয়ে ভারতে বর্ধমানে চলে যায় মাসুম ওরফে সাজিদ।
রোববার (২৩ নভেম্বর) ফাতেমার মা কমলা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেছেন, ভারতের বর্ধমানে যাবার পর ফাতেমা প্রথম দিকে তার সাথে যোগাযোগ করলেও দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ ছিলো না।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, রফিক শেখের পরিবারটি ছিল মাসুম ওরফে সাজিদের উপর নির্ভরশীল। রফিক এলাকায় কোন কাজকর্ম করতো না।
পরিবারটির গতিবিধি ছিল রহস্যজনক। প্রায় অপরিচিত লোকজন তাদের বাড়ীতে আসতো।
ফতেমার মা কমলা বেগম বলেন, তার ভাসুর খেয়াল উদ্দিনের ছেলে নিজাম উদ্দিনের কথা মতো সে তার বড় মেয়ে ফাতেমাকে মাসুম ওরফে সাজিদের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকেই তারা জামাইয়ের কর্মকান্ডের বিরোধীতা করে আসছিলেন। এক পর্যায়ে জামাই তার মেয়েকে নিয়ে ভারতে চলে যায়।
কমলা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ভারতে ফাতেমার ২য় সন্তানের জন্ম হয়। ভারত থেকে সন্তান সাজ্জিত (১৪ মাস) ও হুমায়রাকে (৭বছর) নিয়ে গত সোমবার ফাতেমা বাড়ীতে আসে। সে জানায় তার স্বামী মাসুম ওরফে সাজিদ ভারতে আটক হয়েছে।
এ ঘটনার পরেদিন পুলিশ এসে শিশু সন্তানসহ ফাতেমা ও তার বাবা রফিক শেখকে পুলিশ এসে নিয়ে যায়।
তবে, তার মেয়ে জেএমবি’র নারী শাখার প্রধান কি না জনতে চাইলে সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে বাগেরহাট ইনফো ডটকম-এর প্রতিবেদককে জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মোল্লাহাট উপজেলার গাওলা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, খেয়াল উদ্দিনের ছেলে নিজাম উদ্দিন জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত। এখন সে পলাতক।
‘নিজামের কারনেই রফিকের জামাই মাসুম ওরফে সাজিদসহ পরিবারটি জঙ্গি সংগঠন সাথে জড়িয়ে পড়ে।’
অনুসন্ধানে জান যায়, জেএমবি নেতা বাংলা ভাই ও সায়েক আঃ রহমানও এই মোল্লাহাট এসে ছিলেন। ডাকাতি করতে গিয়ে বাংলা ভাই প্রথম মোল্লাহাট গ্রেপ্তার হন।
সে সময় প্রথম বাংলা ভাই ও সায়েক আঃ রহমানের জঙ্গি তৎপরতা প্রকাশ পায়। তবে, এখন মোল্লাহাটে বর্তমানে কোন জঙ্গি তৎপরতা নেই বলে দাবি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বাগেরহাট জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।