বাগেরহাটের কচুয়ায় পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের স্বাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা সুবোধ করাতিকে (৬০) স্থানীয় রিপোটার্স ক্লাবে আটকে রাখার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ এক ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
মঙ্গলবার রাতে মুক্তিযোদ্ধা সুবোধ করাতি কচুয়া থানায় স্থানীয় রিপোটার্স ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক খন্দকার নিয়াজ ইকবাল, ইউপি সদস্য মামুন শেখসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ওই মামলার এজাহারনামীয় আসামী ইউপি সদস্য মামুন শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার বিকালে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
খন্দকার নিয়াজ ইকবাল যশোর থেকে প্রকাশিক লোকসমাজ পত্রিকার কচুয়া প্রতিনিধি।
মুক্তিযোদ্ধা সুবোধ করাতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার রাঢ়িপাড়া ইউনিয়নের সোলারকোলা গ্রামের রাজাকার আব্দুল লতিফ তালুকদারের (৭৫) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম স্বাক্ষী। গত ১০ জুন লতিফ তালুকদার পুলিশের হাতে আটক হন। বর্তমানে তিনি ঢাকার কারাগারে আটক রয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত মামুন শেখ (৩২) সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
মামলায় সুবোধ করাতি বলেন, ২/৩ বছর আগে আমি আমার গ্রামের রঞ্জিদা বেগমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদে ধার নেই। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মধ্যে আমি তার সেই পাওনা টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হই। গত সোমবার সকালে তিনি আমাকে টাকার জন্য কচুয়া সদরের রিপোর্টার্স ক্লাবে ডেকে নিয়ে যান।
সেখানে গেলে ইউপি সদস্য মামুন, সাংবাদিক নিয়াজ, পাওনাদার রঞ্জিদা ও রুহুল নামে চারজন আমাকে পাওনা টাকার জন্য চাপ দেয়। তারা বলেন এই টাকা না দিলে আমাকে এই ঘরে আটকে রাখা হবে এবং টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত এই ঘরে থাকতে হবে।
সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত আমাকে ওই পাওনা টাকার জন্য ওই ঘরে আটকে রাখা হয়। পরে আমাকে আটকে রাখার খবর জানাজানি হলে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। এখান থেকে ছাড়া পেয়ে আমি বিষয়টি পুলিশকে জানাই। পরে পুলিশ আমার মামলা নিয়ে ইউপি সদস্য মামুনকে গ্রেপ্তার করে।
তবে, রিপোটার্স ক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা সুবোধ করাতিকে আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে কচুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি খন্দকার নিয়াজ ইকবাল এই প্রতিবেদককে বলেন, তিন বছর আগে রঞ্জিদা বেগমের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা সুবোধের নেয়া ৫০ হাজার টাকা সুদে আসলে তা আড়াই লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
পাওনাদার রঞ্জিদা বেগম তাঁকে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য রিপোটার্স ক্লাবের পাশের একটি ঘরে সোমবার সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত আটকে রাখেন।
এরসঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। সুবোধ করাতি যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের স্বাক্ষী আমার বাবা খন্দকার শামসুল হকও একজন স্বাক্ষী। আমি তার কথা বিবেচনা করে সুদেরহার টাকা কমাতে ওই পাওনাদারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেছি মাত্র।
‘মুক্তিযোদ্ধার উপকার করতে যেয়ে আমি নিজেই ফেঁসে গেছি।’
আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে রঞ্জিদা বেগম বলেন, সুবোধ করাতি প্রায় তিন বছর আগে আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। গত তিন বছরে ধার নেয়া একটি টাকাও তিনি পরিশোধ করেননি। বরং এই পাওনা টাকা চাইলে সে আজ না কাল বলে আমাকে ঘুরাতে থাকেন।
গত সোমবার তাঁকে ডেকে নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন ও সাংবাদিক নিয়াজকে নিয়ে রিপোর্র্টার্স ক্লাবে বসা হয়েছিল। আমার পাওনা টাকা কবে তিনি পরিশোধ করবেন সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
কচুয়া থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বুধবার সকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, পাওনা টাকা আদায় করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের অন্যতম স্বাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা সুবোধ করাতিকে রিপোর্টার্স ক্লাবে আটকে রাখার অভিযোগে সাংবাদিক, ইউপি সদস্যসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
কেউ যদি কারও কাছে টাকা পায় সেজন্য আইন আছে। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেই আইন হাতে তুলে নেয় তাতো আর মেনে নেয়া যায়না।
মুক্তিযোদ্ধার দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামী ইউপি সদস্য মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদেরও ধরতে অভিযান শুরু করা হয়েছে।