আসমা আক্তার (১৪)। মংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
প্রতিক্লাসেই প্রথম স্থান অধিকার করে তার মেধার ধার দেখিয়েছেন বরাবর। আসমার স্বপ্ন বড় হয়ে ডাক্তার হবে। মানুষের সেবা করবে। দুঃখিনী মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে।
আসমার স্বপ্নটা সুন্দর হলেও তার জীবনের গল্পটা অন্যরকম। মংলার শহরতলীর শামছুর রহমান রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে বাবা মা ও পাঁচ বছরের ছোট্ট ভাই আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে নিয়ে থাকতেন আসমা।
অভাবের সংসার। তবু চলছিলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। গল্পের ট্রাজেডি শুরু হয় যখন ফ্যাক্টরী শ্রমিক বাবা কামরুল ইসলাম কাজ খোঁজার নাম করে ঢাকায় চলে যান। আসমা তখন ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
পরে জানেন বাবা নতুন করে সংসার পেতেছেন ঢাকায়। আর তাদের কাছে আসবেন না। ভরন পোষণও দেবেন না।
এ সময় মা নাসিমা বেগম (৩১) জীবন সংসারে টিকে থাকার লড়াইকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাস্তায় নামেন। পরিবারের হাল ধরতে অনেক চেষ্টা করে মংলার একটি ফ্যাক্টরীতে কাজ নেন তিনি। কিন্তু এখানেও বিধিবাম। আসমা যখন এসএসসি পরীক্ষার্থী তখনই ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যায়।
আসমার স্বপ্নের আকাশে নেমে আসে কালো মেঘ। খেয়ে না খেয়ে মংলার বান্ধাঘাটা এলাকায় মামার সাথে একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। মামা আব্দুল বারেক হোসেন স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। সেও সম্প্রতি নতুন সংসার পেতেছেন।
আসমাদের চারিদিক এমনিতেই অন্ধকার হয়ে আসছে। স্বপ্ন ভাঙ্গার আশঙ্কায় প্রতিনিয়ত ঢুকরে ঢুকরে কাঁদেন আসমা। তাহলে কী আসমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না?
এত দিনের লালিত স্বপ্ন মুকুলেই ঝড়ে পড়বে? কিন্তু অন্ধকারের পরে আলো আসবেই। সেটাইতো মানুষের স্বপ্ন।
মংলা পোর্ট পৌর সভা থেকে মেধাবী ও হত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য ফান্ড করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আসমাকে সাধ্যমত পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার সকালে পৌর সভায় আসেন আসমা আক্তার। তখন তার সাথে কথা হয় তার। এসময় আসমার সাথে ওই স্কুলের মেধাবি ছাত্রী নাজমিন আক্তার, মাহিয়া আক্তার, রহিমা আক্তার, ফারজানা আক্তার, পাখি আক্তারও ছিলেন।
তারও এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। এসেছেন সহযোগীতার অর্থ নিতে। তাদের সকলের গল্পও আসমারমত।
আসমা বলেন, “এসএসসি পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের টাকা নিতে এসেছি। এর আগেও পৌর কর্তৃপক্ষ যাদের স্কুল ইউনিফর্ম নেই তাদেরকে ইউনিফর্ম কিনে দিয়েছে। মেয়র স্যার আমাদের সাধ্যমত সহযোগীতা করছেন। আর তাই আমরাও স্বপ্নের পথে হাঁটছি।”
এ সময় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. শামছুর রহমান বলেন, “পৌর কর্তৃপক্ষ দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আমাদের মংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অন্তত ৫০জন শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেন।”
মংলা পৌরসভার উচ্চমান সহকারী সহিদ বলেন, “প্রতিটি স্কুল থেকে বাছাই করে দুঃস্থ এতিম মেধাবীদের পৌরসভার ফান্ড থেকে এ সহযোগীতা করা হচ্ছে। এর জন্য আমি স্কুলে স্কুলে খোঁজ নিচ্ছি। এমন কী শিক্ষার্থীদের তথ্য সঠিক নিশ্চিত হওয়ার জন্য সরেজমিনে টিম যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থীদের এ সহযোগীতা করা হয়েছে।”
মংলা পৌর মেয়র জুলফিকার আলী বলেন, “শিক্ষাই জাতীর মেরুদণ্ড। শহরের উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিকদের শিক্ষার ব্যাপারে সচেতনতা মূলক প্রচারণা শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় যারা অসহায় তাদের জন্য পৌর ফান্ড থেকে সহযোগীতা করা হচ্ছে।”
এছাড়া শিশুদের মেধা বিকাশের জন্য মংলার পুরাতন থানার পিছনে খেলার মাঠ ও শিশু পার্ক করার ঘোষণা দেন তিনি।