ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দায়িত্বরত এক শিক্ষিকাকে মারধরের ঘটনায় আলোচিত সেই ইউপি চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা বাবুলকে শ্রীঘরে পাঠিয়েছে আদালত।
রফিকুল ইসলাম বাবুল বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং একই উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
শিক্ষিকাকে মারপিটের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার বাগেরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট নুসরাত জাহান তাকে জেল হাজতে প্রেরনের এ নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি মোঃ মাহফুজার রহমান ( লাহু) মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষিকাকে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সরকারী কাজে বাধা এবং ওই শিক্ষিকাকে শ্লীতাহানির চেষ্টা করেন পেড়িখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল।
মঙ্গলবার সকালে আসামী জামিনের জন্য আদালতে হাজির হলে আদালত তাঁর জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরন করে।
তথ্যসংগ্রহকারী ওই শিক্ষিকার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকন জানান, পেড়িখালী ইউপি চেয়্যারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল এই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকায় আত্মগোপন করেন। গত ১১ নভেম্বর ঢাকার শাহাবাগ থানা পুলিশ গুলিস্থান এলাকার একটি হোটেল থেকে তাকে আটক করে। কিন্তু সেখানে ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান প্রভাব বিস্তার করেন।
ফলে শাহাবাগ থানা পুলিশ ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে তাকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিট্রেট আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তার জামিন মঞ্জুর করে। চেয়ারম্যান বাবুল এলাকায় ফিরে তার লোকজনকে যেখানে আমাকে পাবে সেখানেই গুলি করে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। এরপর থেকে খোকন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে দাবী করেন।
২০১৪ সালের ১৪ জুন ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রমে তথ্যসংগ্রহকালে রামপাল উপজেলার বড় কাটালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকনকে পেড়িখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল মারধর করেন।
এ ঘটনায় তথ্য সংগ্রহকারী বেগম খাদিজা ইয়াসমিনের স্বামী মোঃ রবিউল আলম অভিযোগ করলে গত ১০ জুলাই রামপাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল রামপাল থানায় প্রভাব বিস্তার করে তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টি ও শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকনকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করছেন বলে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের প্রক্ষিতে নির্বাচন কমিশন গত ২৩ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়। একই সাথে রামপাল থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবদের এ নির্দেশনার চিঠি দেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মু. আবদুল অদুদ।
শিক্ষিকাকে মারধর ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের খবর বাগেরহাট ইনফো ডটকমসহ দেশের বেশ কিছু জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশ পায়। বিষয়টি নিয়ে জেলা ব্যাপী ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনা শুরু হয়।
পরে বাগেরহাট পুলিশ সুপারের নির্দেশে এই আলোচিত মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নিকট হস্তান্তর করা হয়।