সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলা (বাগেরহাট) থেকে ফিরেঃ আজ ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হনে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’।
ভয়াল সে রাতে ঘন্টায় প্রায় ২৪০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা বাতায়ে (ঝড়)। লন্ডভন্ড করেদেয় বিস্তৃণ জনপদ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগেরহাট জেলার শরণখোলা এবং সাউথখালি।
ব্যাপক ক্ষতি হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের প্রাকৃতিক রক্ষা কবজ সুন্দরবনের। ধ্বংসলীলা চলে সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ আসপাশের অন্তত ১৬ জেলায়।
১৪ নভেম্বর ২০০৭। সকাল থেকেই উপকূলের আকাশে গুরু গম্ভীর মেঘ আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে প্রচণ্ড বেগে উপকূলে আঘাত হানে স্মরণকালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর। মাত্র কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয় যায় উপকূল। পানির প্রবল তোড়ে বেড়ীবাঁধ উপচে এবং ভেঙে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহূর্তে পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তুপে।
নিহত হন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিলো কয়েক হাজার। গবাদি পশু, ফসল সবকিছু হারিয় আশ্রয়হীন হন কয়েক লক্ষ মানুষ।
সে ঝড় থেকে সম্পদহানী কতটা রক্ষা করা যেত না নিয়ে তো প্রশ্ন আছেই তবে, সচেতনা আর দূর্যোগ প্রস্তুতি থাকলে যে আরো বহু প্রান রক্ষা করা যেত না তা নিয়ে ভিন্যমত নেই স্থানীয় এবং দূর্যোগ প্রস্তুতি বিষয়ে অভিজ্ঞদের।
তবে, সিডরের সাত বছর পর কতটা বেড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের দূর্যোগ বিষয়ে স্বচেতনা, কিম্বা দিনে এমন কোন দূর্যোগ কি ভাবে মোকাবেলার কথা ভাবেন তারা। আর কতটুকুবা প্রস্তুতি আছে তৃণমূলের জন সাধারণের।
এমন প্রশ্ন ছিলো শরণখোলার উত্তর কদম তলা গ্রামের জেলে গোপাল কর্মকারের (৫৩) কাছে। তিনি বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ‘এখন আবহাওয়া একটু খারাপ মনে হলেই আমরা টিভি রেডিও নিয়ে আমারা খবর শুনি। সিগনালে (ঝড়ের পূর্বাভাস) খবর শুনলেই আমার (ঘূর্ণিঝড়) আশ্রয় কেন্দ্রে যাই।’
একই এলাকার নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৪২) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, আগে আমাদের কেউই কোন ঝড়-ডকে (ঝড়-বৃষ্টিতে) আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাইতো না। সিডরের পর থেকে এখন সবাই সিগনাল শুনলে আশ্রয় কেন্দ্রে ছোটে।
শুধু প্রবীন বা তরুণরা নয় দূর্যোগ স্বচেতনা বেড়েছে উপকূলের শিশু-কিশোরদের মাঝেও।
শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের পূূর্ব আমড়াগাছিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র মো. ইবরাহিম হাওলাদার। বিদ্যালয় চলাকালে তার কাছে জানতে চাই যদি এখন ঝড় আসে তবে কি হবে?
ইবরাহিম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘ঝড় আসলে আমারা সাইক্লোন শেল্টারে যাব। তা না হলে আমারা মারা যেতে পারি।’
এই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র মুক্তা আক্তার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ঝড় আসলে আমরা স্কুলে আসব। আমাদের স্কুলটিও সাইক্লোন শেল্টার। এর এখানে জায়গা না থাকলে আশপাশের উঁচু এবং শক্ত ঘরে আশ্রয় নিতে হবে
এ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পূলিন বিহারী শিকারী বাগেরহাট ইনফোকে জানান, এখন পাঠ্য বইয়েও সংযুক্ত হয়েছে দূর্যোগ স্বচেতনা এবং প্রস্তুতির বিষয়গুলো। ঝড় এলে কি করতে হবে।
তাছাড়া বিভিন্ন সরকারী বেসকারী সংস্থা সিডরের পর থেকে এ অঞ্চলে নানা ধরনের স্বচেতনা মূলক কার্যক্রম পরিচালা করছে। ফলে মানুষের মাঝে দূর্যোগ স্বচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়ছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সাইকোল প্রিপারেশন প্রগ্রাম) শরণখোলা থানার টিম লিডার হাবিবুর রহমান ফকির বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘সিড়রের পর মানুষ সচেতন হয়েছে। তারা এখন নিজেদের থেকেই প্রশ্ন করে কত নং (নম্বর) সংঙ্কেত চলে।’
এখন আর কউকে জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে হয় না।
৫৫ জন সেচ্ছা সেবক নিয়ে গঠিত এই টিমের প্রধান আরো জানান, এখন আগের তুলোনায় অনেক সাইক্লোন শেল্টার হয়েছে। মানুষের মাঝে স্বচেতনাও বেড়েছে। তাই নতুন করে কোন দূর্যোগ এলে হতা হতের সংখ্যা অনেক কমবে।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সিড়রের পর এই এলকায় অনেক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র হয়েছে। তবে জন সংখ্যার তুলোনায় এখনও আরো আশ্রায় কেন্দ্রের দরকার আছে।
তবে মানুষ এখন আগের থেকে অনেক স্বচেতন। তারা জানে দূর্যোগ এলে কি করতে হবে।
দূর্যোগ প্রবন উপকূলিয় এলাকার মানুষ এখন নিজের আশ্রয়ের পাশাপাশি গবাধি পশু-পাখির জন্যও ঝড়-জলচ্ছ্বাসে নিরাপদ আশ্রয়স্থল নির্মানে দাবি রাখছেন।
দূর্যোগ বিষয়ে সাধারণ জনগনের এমন সচেতনতা এবং প্রস্তুতি বাংলাদেশের বড় অর্জণ বলেও উল্লেখ করে তিনি।