১৫ নভেম্বর ! দেশের দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের কাছে এক বিভীষিকা। সাত বছর আগের ২০০৭ সালের এই দিনে উপকূলে আঘান হানে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণীঝড় ‘সিডর’।
সে ভয়াল রাতের কথা মনে পড়লে এখনও শিওরে ওঠেন বলেশ্বর নদী তীরের জনপদ বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার মানুষ।
সুন্দরবন অতিক্রম করে এ বলেশ্বর নদ দিয়েই সেদিন উপকূলে আঘাত হনে সিডর। লন্ডভন্ড করেদেয় বিস্তৃণ জনপদ। ঘন্টায় প্রায় ২৪০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা বাতায়ে (ঝড়) সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগেরহাট জেলার শরণখোলা এবং সাউথখালি।
ব্যাপক ক্ষতি হয় সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ আসপাশের অন্তত ১৬ জেলা। সিডরের সে ধ্বংসলীলা চলে সুন্দরবরে একাংশের উপরও।
নিহত হন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিলো কয়েক হাজার। গবাদি পশু, ফসল সবকিছু হারিয় আশ্রয়হীন হন কয়েক লক্ষ মানুষ।
সরকারী হিসাবে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডরে’ আঘাতে বাগেরহাট জেলায় মারা গিয়েছিলো ৯০৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশু। তবে বেসরকারী হিসাবে প্রাণহানীর এ সংখ্যা ছিলো পাঁচ হাজারের বেশী। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন।
সরকারী হিসেবে সিডরের আঘাতে বাগেরহাট জেলায় ৬৩ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছিল। আহত হয়েছিল ১১ হাজারের বেশী মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দুই লাখ ৮৩ হাজার ৪৮২টি পরিবার, ৩৬৭ কি:মি পাকা রাস্তা, ৮৬২ কি: মি: কাঁচা সড়ক, প্রায় ৬৫ কি:মি: বাঁধ এবং ৭৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দেখা দিয়েছিল শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মংলা উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শরণখোলা উপজেলা এবং এই উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন। সিডরের পর সরকারীভাবে জেলায় মোট ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছিল ৪৫৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সরকারী একটি হিসাব (রিপোর্ট) অনুযাই সিড়রের কারণে তখন নষ্ঠ হয়েছিল প্রায় ৬ লক্ষ টন ধান, মারা যায় প্রায় ২ লাখ ৪২ হাজার গৃহপালিত পশু ও হাঁসমুরগী। ধ্বংস হয় ৯ লখ ৬৮ হাজার ঘরবাড়ি, দুই লাখ দশ হাজার হেক্টর জমির ফসল। মারা যায় সুন্দরবনের বিপুল সংখক প্রাণী।
এমন প্রাণঘাতি ধ্বংসলীলার পর আবারও ঘুরে দাড়িয়েছে অসম্ভব সাহসী আর উদ্যমী সাগর পাড়ারে মানুষগুলো। কিন্তু আজও তারা ভুলতে পারেনি সে দিনের ভয়াল স্মৃতি। বিভীশিকাময় দুর্বিসহ সে দিনের কথা মনে করে আজও কেঁদে ওঠেন স্বজনহারা মানুষ।
কেমন ছিলো সেদিনের প্রলঙ্ককারী সে সিডরের আগ্রাসন ? মৃত্যু কাছ থেকে আবারও পূর্ণরজীবন পাওয়া মানুষগুলোর জীবন সংগ্রাম এখন কেমন ? কি ছিলো সেদিনের মিনতি ? প্রত্যাশার কতটা’ই বা আজ পূরণ হলো? কি ভাবে আবারও ঘুরে দড়াল মূহুর্তের ধ্বংযগ্যে বিধস্ত সে জনপদ ?
এমন নান প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাম্প্রতি (১৩ নভেম্বর) সরেজমিনে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সিডর বিদ্ধস্ত প্রত্যন্ত এলকাগুলো ঘুরে এসেছেন বাগেরহাট ইনফো ডটকম –এর করেসপন্ডেন্ট। দিন ভর সেদিনের সেই উপদ্রুত এলাকাগুলোতে ঘুরে, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা এখনকার বর্তমান অবস্থা।
এদূর্যোগকে জয় করা অসম্ভব সাহসী মানুষগুলোর বর্তমান দাবি আর এ সাত বছর পর দূর্যোগ সচেতনতা নিয়ে বাগেরহাট ইনফো ডটকম –এ পড়ুন দুই পর্বের বিশেষ ধারাবাহিক – ‘সিডরে’র ৭ বছরঃ কবে হবে বাঁধ? এবং সিডরে’র ৭ বছরঃ উপকূলে বেড়েছে দূর্যোগ সচেতনতা।