বাগেরহাটের পল্লীতে রিমা সাহা (২০) নামে এক গৃহবধুকে যৌতুকের দাবীতে স্বামীর পরিবার পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার বিকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামে এই ঘটনা।
বুধবার দুপুরে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে ওই গৃহবধুর লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক নিহতের স্বামীর পরিবার লোকজন। তাদের কাউকে হাসপাতাল মর্গে দেখা যায়নি।
তবে নিহতের স্বামীর পরিবারের এক আত্মীয়ের দাবি করেছেন পারিবারিক কলহে গৃহবধূ রিমা গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
নিহতের বড় ভাই রিপন কুমার সাহা হাসপাতাল মর্গে বসে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে অভিযোগ করে বলেন, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামের অমল সাহার ছেলে নিমাই সাহার সঙ্গে খুলনার তেরখাদা উপজেলার তেরখাদা সাহাপাড়া গ্রামের দিপক সাহার মেয়ে বিয়ে হয়। সে সময়ে ভগ্নিপতিকে নগদ ৭০ হাজার টাকা, সাত ভরি সোনার গহনা এবং একটি মোটরসাইকেল যৌতুক হিসাবে দেয়া হয়।
বিয়ের কিছুদিন পর থেকে শুরু হয় সাংসারিক কলহ। সংসারে শান্তির কথা চিন্তা করে আমার বোন তা নিরবে সহ্য করে আসছিল।
গত ছয় মাস আগে যৌতুকের বিভিন্ন দাবিতে বোনের শ্বাশুড়ি প্রতিমা সাহা ও দেবর চঞ্চল সাহা তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। কিছুদিন আগে ভগ্নিপতি নিমাই সাহা আমাকে ফোন করে বলে তাকে দেয়া মোটরসাইকেলটি চেঞ্জ করে দিতে। আমি তাকে বলি যেটা আছে সেটা আরও কিছুদিন চালাতে লাগো খুব শিগগির আমি তোমাকে নতুন আরেকটি কিনে দেব।
কিন্তু মঙ্গলবার বিকালে বোনের বাড়ি থেকে ফোনে আমাদের তার বাড়িতে যেতে বললে আমি আমার বাবা মাকে নিয়ে দ্রুত বোনের বাড়ি আসি। এসে দেখি বোনের মরদেহ বাড়ির বারান্দায় রাখা রয়েছে।
‘বোন নাকি বসত ঘরের আড়ার সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করছে। আমার বোন আত্মহত্যা করেনি। তাঁকে তার স্বামীর পরিবার নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে’ বলে তিনি দাবি করেন। তিনি এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন তিনি।
স্বামীর পরিবারের আত্মীয় চাচাতো ভাই মদন মোহন সাহা অবশ্য দবি করেছেন গৃহবধুকে আত্মহত্যা করেছে। বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, সংসারের খুটি নাটি বিষয় নিয়ে শ্বাশুড়ি ও দেবরের সঙ্গে মাঝে মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। কিন্তু তারা রিমার ওপর কোন নির্যাতন করতো না।
সে নিজেই মঙ্গলবার বিকালে বসত ঘরের আড়ার সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মইন উদ্দিন মোল্লা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, গৃহবধূ রিমার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া এখনই কিছু বলা যাবেনা।
নিহত গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করতে যাওয়া বাগেরহাট মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বারুইপাড়া গ্রামের গৃহবধু রিমা গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এই সংবাদ পেয়ে আমি সেখানে যাই। কিন্তু নিহতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুলিশ যাওয়ার আগেই তার লাশ ঘরের আড়া থেকে নামিয়ে ফেলে।
তার গলায় দাগের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গৃহবধূর মৃত্যু রহস্যজনক। লাশের ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে বোঝা যাবে সেটি হত্যা না আত্মহত্যা।