নৌপথে নিরাপত্তার দাবিতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের নৌ পরিবহণ ধর্মঘট (কর্মবিরতি) তৃতীয় দিনের মত অব্যাহত রয়েছে।
ধর্মঘটের ফলে শুধু চট্ট্রগ্রামের একাংশ ছাড়া মংলা বন্দরসহ সারাদেশে নদী পথে সকল ধরণের পণ্য পরিবহণ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সোমবার তৃতীয় দিনের মত নৌ শ্রমিকদের এ ধর্মঘটে অচল অবস্থা তৌরী হয়েছে দেশের নদী এবং সমুদ্র বন্দর সমূহে। তবে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল রয়েছে স্বাভাবিক।
মংলা বন্দর সূত্র মতে, মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও ফেয়ারওয়ের বহি:নোঙ্গরে অবস্থানরত সকল দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহণ বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়েছে এ বন্দর। বন্দরের শিল্প এলাকা ও ইপিজেডে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের (কেন্দ্রীয়) সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, “লাইটারেজ জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন সরকারের সাথে আতাত করে একক সিদ্ধান্তে শুধুমাত্র চট্টগ্রামে লাইটারেজের কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। এর সাথে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের কোন সম্পৃত্ততা নেই।”
লাইটারেজ জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়ন চট্ট্রগামের ওই শাখাকে নৌ মন্ত্রীর পকেট সংগঠন উল্লেখ করে চৌধুরী আশিকুল আলম জানান, নৌপথে নিরাপত্তার নিশ্চিতের দাবিতে শনিবার থেকে সারাদেশে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। যে ধর্মঘট এখনও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
‘আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করিনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’
তিনি আরো বলেন, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ধর্মঘটের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে লাইটারেজ জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট পালন শুরু করে।
এ ধর্মঘট নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন আহুত জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের নয়। তাই তারা কোনভাবেই ধর্মঘট প্রত্যাাহরের ক্ষমতা ও যৌক্তিতা রাখেনা বলেও উল্লেখ করেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের মংলা উপজেলা শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, কোথা থেকে মিডিয়ায় এসেছে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি জানি না। আমরা ধর্মধট প্রত্যাহার করেনি।
নদী পথে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ডাকাতি বন্ধ এবং নৌযানে কাজ করা শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবীতে আমাদের অর্নির্দিষ্টকালের ধর্মঘট তৃতীয় দিনেরমত চলছে।
তিনি আরো জানান- ধর্মঘটের কারণে মংলার দিগরাজ এলাকা থেকে বানিয়াশান্তা পর্যন্ত ২শ’র কাছাকাছি কার্গো নঙর হয়ে আছে। এছাড়া মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ থেকে কোন নৌযান পণ্য নিয়ে দেশের কোথাও ছেড়ে যায়নি।
এ ব্যাপারে মংলা বন্দরের ডাইরেক্টর ট্রাফিক কাজী গোলাম মোক্তাদের বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান- জাহাজের কাজ চললেও নদী পথে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। তবে খুব শিগগির সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি।
ধর্মঘটের কারণে মংলা বন্দরে অবস্থান করা ৩টি বিদেশী জাহাজের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে স্বিকার করেছেন হারবার মাষ্টার আক্তারুজ্জামান।
এদিকে, টানা তৃতীয় দিনের নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে জাহাজের কাজ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম ও মংলার স্টিভিডরসদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাতে কার্গো জাহাজ “এমভি কর্ণফুলী ৫” চট্টগ্রাম থেকে ইউরিয়া সার নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় লক্ষীপুর জেলার আওতাধীন কমলগঞ্জ ও রামগতি থানার মধ্যবতি মেঘনা নদীর বাত্তির খাল নামক স্থানে ডাকাতের কবলে পড়ে। বর্তমানে ওই জাহাজের ৭ জন নাবিক নিখোঁজ রয়েছে।
এরপর শনিবার সকালে পন্যবাহী নৌযানের লক্ষাধিক নৌ শ্রমিক সারাদেশে এ ধর্মঘট শুরু করে।