শুধুমাত্র রাজনীতি করার অপরাধে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার তৃণমূল বিএনপির এক নেতা। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
জানা গেছে, দলের জন্য নিবেদিত এ নেতার ছোট ভাই এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদককেও একই সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিলো। ফলে নিজ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য এখন রাজধানী ঢাকাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম কর্মীদের দেখেও ভয়ে শিউরে উঠেন তিনি। আক্রমনের আশঙ্কায় কথা বলতেও রাজী নন তার পরিবারের সদস্যরা। এমন দুঃসহ পরিস্থিতিতেও খোঁজ নেননি বিএনপির কোন দায়িত্ত্বশীল নেতা। জেলা কিংবা জাতীয় পর্যায়ের কোন নেতাকেও কাছে পাননি তারা।
জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর নিজ এলাকা থেকে নিরাপত্তার কারণে পালিয়ে থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের আক্রমনে শিকার হন বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার গৌরাম্ভ ইউনিয়নের বিএনপি সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান।
সারাদেশের ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যায়ের সূযোগে সরকার সমর্থিত সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে গুলি, রামদা ও চাপাতির এলাপাতাড়ি আঘাতে মারাত্মকভাবে জখম করে মৃত মনে করে ফেলে যায়। সন্ত্রাসীদের কোপে তার দুই হাতের কব্জি পড়ে যায়। তার গলা, মাথা ও গালে মারাত্মক জখমের সৃষ্টি হয়। এসময়ে তার কোলে মাত্র এক বছরের নাতী থাকলেও রেহাই পাননি তিনি।
খুলনা পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রায় ১০০ গজ দুরত্বে তার ওপর এ হামলা হলেও তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেননি।
পরবর্তিতে মুমূর্ষ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা তাকে খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে আনা হয়। এখন এই হাসপাতালে বসে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। অথচ যে দলের জন্য আজ তার এই অবস্থা সেই দলের কোন নেতা এখন পর্যন্ত তার কোন খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।
আহত বিএনপি নেতার ছেলে আলি ইমরান জনি বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, একই দল করার কারণে ২০০২ সালে ৩ জুলাই তার ছোট চাচা ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক আসলাদ উজ্জামনসহ তিন বিএনপি কর্মীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে এবং ৭/৮ জনকে আজীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয় একই সন্ত্রাসী বাহিনী। বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম সরদারের নেতৃত্ত্বে ওই হামলা হয়েছিলো। এ কারণে তার বিরুদ্ধে করা মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজাও পেয়েছিলেন।
কিন্তু সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে প্রতিশোধপরায়ন হয়ে তার বাবাকে হত্যার উদ্যেশ্যে হামলা করেন। এসময়ে আসামীর শালা রেজাউল কসাই, ভায়রা সিরাজসহ ১০/১২জন অংশগ্রহন করে। এ ব্যাপারে খুলনা সদর থানায় একটি মামলা (মামলা নং ১০/৩৬২ তারিখ ৪/১১/১৪, খুলনা সদর থানা) করা হয়েছে। কিন্তু তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার কারণে ভয়ঙ্কর এই সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের।
অপরদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম সরদারের আপন দুই ভাই ইমাম সরদার ও সাইদুর সরদার (জনযুদ্ধের ক্যাডার) খুলনা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল ইমাম হত্যা মামলার সাথে সম্পৃক্ত থাকাসহ একাধিক মামলার আসমাী ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে (ক্রসফায়ারে) তারা নিহত হন।
কিন্তু এরপরও থেমে নেই ভয়ঙ্কর এই সন্ত্রাসী বাহিনীর তৎপরতা। একের পর এক হত্যাযঞ্জ চালিয়ে গেলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলছে না।
আহত বিএনপি নেতার স্ত্রী আসমা সুলতানা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, একই সন্ত্রাসীরা একের পর এক সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করছে। কিন্তু শুধুমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়ার কারণে আমরা কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বিএনপি নেতা লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়। তিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে দোষিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকুমার রায় বলেন, আমরা আসামীদের গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।