বঙ্গোপসাগর উপকূলের সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোল নামক স্থানে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব।
সুন্দরবন বিভাগের হিসাব মতে এ বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৩১তম উৎসব আয়োজন।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দুবলার চরের আলোরকোলে ফানুস উড়িয়ে রাস মেলার উদ্বোধন করেন মেলা আয়োজক কমিটির নেতা ও দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন আহমেদ।
এর আগে বুধবার ভোরে সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নর-নারীরা পাপ মোচনের প্রত্যাশায় পুণ্যস্নান করেন। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ভোরে সাগরের নোনা জলে গঙ্গা স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই মেলা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় কর্মকর্তা মিহির কুমার দে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, রাস উৎসবের বিষয়টি অনেক আগে কথা। সমুদ্রের ওই এলাকায় বেশির ভাগ হিন্দু জেলেরা মাছ শিকার করতো। কেউ কেউ বলে বিংশ শতাব্দির ২য় দশকের কথা।
এক পূর্ণিমার রাতে শ্রীরাধাকে সাথে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে অবগাহন করতে দেখেন জেলেরা। তখন তারা ওই জায়গাটিকে পবিত্র স্থান মনে করেন। শুরু করেন পূণ্যস্নান। প্রথমে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও ধীরে ধীরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। এটাকে আরো বড় পরিসরে আয়োজন করেন দুবলার ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি মেজর জিয়া উদ্দিন।
হিন্দু ধর্মালম্বীদের ধারনা, এই পুন্য স্নানের মধ্যে দিয়ে সকল পাপ মোচন এবং মনস কামনা পূণ্য হবে। তবে শুধু হিন্দুধর্মালস্বী নয়, এখন সকল ধর্মালম্বীদের মিলন মেলায় পরিনত হয় আলোরকোল।
রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার সাহা জানান, প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকের রাস পূর্ণিমার তিথিতে এ উৎসব করা হয়।
দুবলার চরের ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি মেজর জিয়া উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, প্রতিবছর এ মেলায় অন্তত দুই লাখ লোকের সমাগম ঘটে। ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে সারাদেশ থেকে সব বয়সী নারী-পুরুষ এখানে আসেন। শুধু দেশের নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা এ রাস মেলায় আসেন।
তবে এ বছর হরতালের কারণে দর্শনার্থী ও পুন্যার্থীর সংখ্যা কম হবে বলে তিনি মনে করেন।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, মূল মেলা হবে বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার ভোরে। রাতভর পূজা-কীর্তন আর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাগর জলে পূন্যস্নানের মধ্য দিয়ে শুক্রবার ভোরে শেষ হবে এ মেলা।
তিনি জানান, এ বছর মেলায় আসা লোকদের হরিণ শিকার বন্ধে বন বিভাগ বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দর্শনার্থীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য বন বিভাগ আটটি নৌপথ নির্ধারণ করেছে। ২ নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের ১৬টি জায়গায় বন বিভাগের বিশেষ দল কাজ করছে।
এছাড়া নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবিও কাজ করছে। পরিবেশ দূষণ ঘটায় এমন বস্তু, মাইক বাজানো, পটকা ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে, রাস উৎসবকে সামনে রেখে বুধবার সুন্দরবনের দুবলার চরে গেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা জানান, দুবলার চরে শুটকি পল্লীর জেলে ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ প্রাণিসম্পদের অবস্থা সর্ম্পকে জানতে তারা বুধবার থেকে তিন তিন সুন্দরবনে অবস্থান করবেন।
এ সময় সেখানে জেলেদের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক করবেন তারা।