কালিগঞ্জ, রামপাল (বাগেরহাট) থেকে ফিরে: দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলার সাথে ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নৌ-রুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খনন কাজ চলছে ধীরগতিতে।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রথম অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিআইডব্লিউটিএ পলি জমে ভরাট হওয়া আন্তর্জাতিক এই নৌ-রুট এর প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকায় খনন কাছ শুরু করে। তবে গত চার মাসে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজেস্ব ৫টি ড্রেজার দিয়ে খনন করেছে মাত্র চার কিলোমিটার এলাকা।
তবে খনন কাজের এ ধীরগতি সর্ম্পাকে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, গত চার মাসে প্রতিষ্ঠানটি খনন কাজের জন্য কয়েক দাফা দরপত্র আহ্বান করেও কোন দেশিয় প্রতিষ্ঠানই অংশ নেয় নি তাতে। পরে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলে “চায়না হারবার” নামে বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানক কজ পেয়েছে। তবে ওই প্রতিষ্ঠানটি এখনও ড্রেজিং এক কাজ শুরু করেনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক এই নৌরুটে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালী অংশে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যায়ে খনন কাজ চালিয়ে এক পর্যায়ে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেছিল বিআইডাব্লিউটিএ।
বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজার এবং রামপাল উপজেলা সদর অংশের রামপাল নদীতে ড্রেজিং এর খনন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ড. মো. শামছুদ্দোহা খন্দকার।
খননের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে দুপুরে তিনি সংবাদিকদের বলেন, দরপত্র আহ্বান করার পরও ঠিকার প্রতিষ্ঠান সাড়া না দেওয়ায় ধির গতিতে চলছে খনন কাছ। তবে সাম্প্রতি আন্তর্জাতিক ভাবে দরপত্র আহ্বানের পর চায়না হারবার নামে একটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেওয়ায় তাদেরকে আমরা মননিত করেছি। খুব শিগগ্রির ওই প্রতিষ্ঠনটি তাদরে নিজেস্ব ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ শুরু করবে।
এ নৌ-রুট খননে শিগগিরই আরও একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যে চ্যানেলটির ২২ কিলোমিটার অংশ খনন কাজ শেষ হবে। আর এ কাজ শেষ হলে চ্যানেলটি পুরোপুরি সচল হবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।
ড্রেজিং এ দেশিয় প্রতিষ্ঠন গুলো অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে দেশিয় ড্রেজিং প্রতিষ্ঠান গুলোর পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে তারা এই দরপত্রে অংশ না নিয়ে থাকতে পারে।
এদিকে, পলি পড়ে চ্যানেলের ২২ কি.মি. ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক এই নৌরুটটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মংলা বন্দর থেকে দেশের অভ্যান্তরসহ প্রতিবেশী দেশ ভারতে পন্য পরিবহনের জন্য সুন্দরবনের ভিতরের দিয়ে ১১০ কিলোমিটার অতিরুক্ত ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে নৌ-যান গুলোকে।
ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নৌ-রুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খনন কাজের জন্য প্রাথমিক ভাবে ব্যায় ধরা হয় আড়াই শ’ কোটি টাকা। ১ জুলাই শুরু হওয়া বিআইডাব্লিউটিএ এর নিজস্ব ৫ টি ড্রেজার দিয়ে এই খনন কাজের ব্যায় নির্ধান করা হয়েছিল ১শ’ কোটি টাকা।
তবে বিআইডাব্লিউটিএ এর বর্তমান খননা প্রক্রিয়াকে ত্রুটি পূণ অভিহিত করেছেন স্থানীয়রা। তারা মনে করেন বর্তমানে যে পক্রিয়ায় খনন কাজ চলছে তাতে সরকারের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
স্থানীয়দের দাবি দিঘ্য দিন ধরে উপজেলার ছোট ছোট খাল গুলো দখল করে চিংড়ি চাষ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে নদীতে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে দ্রত নদী মরে যাচ্ছে। তাই বাধ অপসারন না করে খনন করা হলে তা আরও ভরাট হয়ে যাবে।
রামপাল ইউনিয়ন চেয়রম্যান শেখ আবু সাঈদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, পলি পড়ে নদী ভরাটের কারনে ৩ বছর ধরে এ চ্যানেল টি বন্ধ রয়েছে। ফলে নৌযান গুলো সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচল করায় বনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
তাই পরিকল্পিত ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তিপক্ষেকে ভরাট হয়ে যাওয়া চ্যানেলটি দ্রুত খননের দাবি জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ড. মো. শামছুদ্দোহা খন্দকার জাননা, ২২ কিলোমিটার এই নৌ-পথের ৩’শ মিটার চওড়া ও ৩০ মিটার গভীরতায় খনন কাজ সম্পন্ন করা হবে। ফলে একদিকে পন্য পরিবহনে অতিরিক্ত ব্যায় এবং সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
খনন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করে বিআইডব্লিউটিআইএ’র প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মতিন, পরিচালক (সিএন্ডপি) মোহাম্মদ হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমানসহ বিআইডব্লিউটিএ ও স্থানীয় প্রশাসনের উর্দ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।