“একটু ভাবুনতো, পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে এসছেন সুন্দরবনে। এখানে ডাঙ্গায় বাঘ আর নদীতে কুমির। এর মধ্যে নামাজের সময় হয়ে এসেছে। সুন্দরবনের ভিতরে মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আযানের ধ্বণি। সাথে সাথে ওযু করে ইমামের সাথে নামাজ আদায় করছেন”-হাসিমুখে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সুন্দরবনের পর্যটন স্পট করমজল স্টেশনের কর্মকর্তা আব্দুর রব।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম এর প্রতিবেদক এর সাথে এক সাক্ষাতে তিনি জানান, সুন্দরবনের ভেতরে করমজল পর্যটন স্পটে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের দান করা টাকায় এই আধুনিক মসজিদটির কাজ প্রায় শেষ। বর্তমানে একজন ইমাম স্বেচ্ছায় সেখানে নিয়মিত নামাজ পড়াতে শুরু করেছেন।তিনি আরো বলেন, “সুন্দরবনের অনেক সময় বেড়াতে এসে পর্যটকরা নামাজ পড়ার বিড়ম্বনায় পড়েন। এখন থেকে এটা আর হবে না।
“বিশাল এই সুন্দরবনের এটাই একমাত্র আধুনিক মসজিদ” উল্লেখ করে রব বলেন, এ মসজিদে ৫ ওয়াক্ত আযান হয়। তবে বনের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য কোনো মাইক ব্যবহার করা হয় না। “মৌয়ালী, বাওয়ালীরা ও নৌযান শ্রমিকরাও এখানে নামাজ আদায় করেন বলে জানান তিনি।
সুন্দরবনে টুরেষ্টদের নিয়ে কাজ করে দা সাউর্থান টুর এন্ড ট্রাভেলস এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিজানুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে পর্যটকদের নিয়ে কাজ করছি। নামাজের সময় হলে পর্যটকরা নৌযানে নামাজ আদায় করেন। অনেক সময় বনের ভিতরে গিয়ে নামাজের সময় বিড়ম্বনায় পড়েন তারা।
করজলে মসজিদ সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটা নিঃসন্দেহে কর্তৃপক্ষের ভালো উদ্যোগ।”
সুন্দরবনের করমজলে মসজিদ সম্পর্কে মংলা পোর্ট পৌর সভার মেয়র জুলফিকার আলী বলেন, “আমি ব্যাক্তিগতভাবে খুশি হয়েছি। একবার তার কয়েক বন্ধু করমজলে বেড়াতে এসে নামাজ পড়তে বিড়ম্বনায় পড়েছিল। তাই এটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।”
সুন্দরবন বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকায় বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি। বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত।
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখন্ড বনভূমি। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে।
সুন্দরবন ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখন্ডে সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে যথাক্রমে সুন্দরবন ও সুন্দরবন জাতীয় পার্ক নামে।
সুন্দরবনকে জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা।মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানা ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।
জরিপ মোতাবেক ৫০০ বাঘ ও ৩০,০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।