আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করলে কচুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম তালুকদারঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হননি।
জামিন প্রদানকারী বাগেরহাট আমলী আদালত-৩ এর বিচারক জিয়ারুল ইসলামের তাকে আজ (২৩ অক্টোবর) ঢাকার ওই আদালতে হাজির হবার স্বর্তে গত ১৯ অক্টোবর জামিন মঞ্জুল করেছিলেন।
ঢাকা থেকে মামলার বাদী ও সেলিম তালুকদারের স্ত্রী বৃহস্পতিবার বাগেরহাট ইনফোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাগেরহাট কারাগারে আটক সেলিম তালুকদারকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকার নারী শিশু ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে বাগেরহাট আদালতে তথ্য প্রেরণের শর্তে সেলিম তালুকদারকে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মজিবুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেছেন, সেলিম তালুকদার কোথায় আছেন তা তিনি জানেন না।
এদিকে, স্ত্রী নির্যাতনকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম তালুকদারের জামিন বাতিল, তাকে গ্রেপ্তার ও তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাট শহরের সাধনা মোড়ে মানববন্ধন করেছে ‘আমরাই পারি’ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট। পরে জোট সদস্যরা একই দাবিতে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন।
সেলিম তালুকদারের স্ত্রী ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, গতকাল ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত সেলিম ঢাকার নির্ধারিত আদালতে (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল) হাজির হননি। অজ্ঞাত স্থান থেকে তিনি আমাকে ও আমার ভাই-বোনদের মামলা তুলে নিতে ভয় ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ‘আমরাই পারি’ জোটের মানববন্ধন থেকে বক্তারা শংকা প্রকাশ করে বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান। কিন্তু ঢাকার একটি নারী নির্যাতন মামলায় বাগেরহাটে গ্রেপ্তার সেলিম তালুকদারকে ঢাকার আদালতে হাজির না করে বাগেরহাট আদালত থেকে জামিন প্রদান করা হয়। এতে এমন একটি উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে যা নারী নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনার বিচারপ্রার্থীদের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। তাই অবিলম্বে সেলিমের জামিন বাতিল করে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য বক্তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে একজন নিয়মিত মামলার গ্রেপ্তার হওয়া আসামী হিসেবে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. পারভীন আহমেদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, আমরাই পারি জোটের বাগেরহাট শাখার কো-চেয়ার পার্সন শেখ নজরুল ইসলাম, মো: কামাল উদ্দিন, আম্বিয়া খাতুন, জেলা ফোকাল পার্সন রিজিয়া পারভীন, মহিলা পরিষদ বাগেরহাটের সভানেত্রী ফরিদা রহমান,সাধারণ সম্পাদক শিল্পী সমাদ্দার প্রমূখ।
মামলা সূত্রে জান গেছে, সেলিম তালুকদারের স্ত্রী জাহানারা বেগম ১২ অক্টোবর ঢাকার হাজারিবাগ থানায় তার উপর শারিরীক নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সেলিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ঐ থানার তদন্ত স্লিপের (ইএস) ভিত্তিতে গত ১৫ অক্টোবর কচুয়া থানা পুলিশ সেলিম তালুকদারকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে ঢাকার মামলার তথ্য ও এনকোয়্যারী স্লিপসহ আদালতের তুললে আদালত তাকে বাগেরহাট কারাগারে পাঠায়। পরদিন ১৬ অক্টোবর সেলিম তালুকদারের একই আদালতে জামিন আবেদন খারিজ হয়।
শুক্র ও শনিবার সরকারী ছুটির পর ১৯ অক্টোবর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে পুনরায় ঐ আদালতে তার জামিন আবেদন করা হলে জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম জিয়ারুল ইসলাম ২০ হাজার টাকা বন্ডে সেলিমের আইনজীবী এবং কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জিম্মায় সেলিম তালুকদারের জামিন মঞ্জুর করেন। একই সাথে তিনি সেলিম তালুকদারকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির হয়ে বাগেরহাট আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেন।
সেলিম তালুকদারের বিরুদ্ধে নেয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বাগেরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে সেলিমের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না তা তিনি জানেন না।