ইলিশ আহরণের সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শত-শত ফিসিং ট্রলার নিয়ে বাগেরহাটসহ উপকূলের জেলেরা বঙ্গোপসাগরে মা ইলিশ আহরন করছে।
উপকুলীয় এলাকার মৎস্যজীবি সংঘঠনগুলো বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে এ নিশ্চিত করেছে।
তারা জানায়, এসময়ে সাগরে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে ওই সব ট্রলার। এখবর মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়লে উপকুলের ঘাটে অলস বসে থাকা জেলেদের মধ্যে ক্ষোভেব সৃষ্টি হয়েছে।
মৎস্য বিভাগ ও আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর তদারকি না থাকায় ভেস্তে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রজনন মৌসুমে ১১ দিন ইলিশ আহরন বন্ধের কার্যক্রম।
উপকুলীয় বেশ কয়েকটি মৎস্যজীবি সংঘঠন সূত্রে জানা গেছে, সরকার ইলিশ প্রজননের জন্য মা ইলিশ রক্ষায় গত ৫ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সুন্দরবনসহ উপকূলীয় নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে সকল প্রকার ইলিশ মাছ ধরা, মজুত বা বহন করা নিষিদ্ধ করেছে। এই সুযোগে এক শ্রেনীর জেলেরা নিষেধাজ্ঞার দুই-তিন দিন আগে থেকে ফিসিং ট্রলারে বরফ নিয়ে বঙ্গোপসাগরে উদ্যেশে রওনা দিয়ে সুন্দরবনের অবস্থান নেয়।
এর মধ্যে বাগেরহাট সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা, বরগুনার পাথরঘাটা, পটুয়াখালীর মহিপুর ও আলিপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের বাঁশখালী ও মহেশখালীসহ উপকূলের শত শত ট্রলার এখন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুয়াকাটা-আলিপুর-মহিপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তাদের এলাকার বেশ কিছু ফিসিং ট্রলার অবরোধের আগে সুনাদরবনে অবস্থান নেয়।
উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতি বাগেরহাটের সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী জানান,উপকূলের কয়েক’শ ট্রলার ১১ দিনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের নদ-নদীতে মা ইলিশ আহরক করে তারা এখন ট্রলার বোঝাই করে উপকূলে আসার অপেক্ষায় সুন্দরবনের গহীনে চিপা খালে লুকিয়ে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীর কারনে তার ফিরতে পারছে না।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই সব জেলেদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
শরণখোলা জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, আমাদের এলাকার জেলেরা আইন মেনে ঘাটে রয়েছে। অথচ, শত শত ফিসিং ট্রলার সাগরে মাছ শিকার করছে। তারা প্রচুর ইলিশ পেয়ে এখন ফিরে আসার অপেক্ষায়। এঘটনায় ঘাটে থাকা সাধারণ জেলেরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাথরঘাটার একাদিক মৎস্যজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের এলাকার অনেক ফিসিং ট্রলার মা ইলিশ ধারার জন্য অবরোধের আগেই বরফ নিয়ে সাগরে গেছে বলে স্বীকার করেছেন।
এবিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন প্রামানিক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ইলিশ অবোরধকালীন কোন ট্রলার ঘাট থেকে ছেড়ে যায়নি। তবে, অবরোধের আগে কোন ট্রলার সাগরে যেয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, ইলিশ আহরন ও বিপনন বন্ধ বিষয়টি ঢাকা থেকে মনিটরিং করতে বাগেরহাটে আসা মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা ইউসুফ হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন একাধিক বার বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের সহকারী পরিচালক লুকাস সরকার জানান, সুন্দরবনের বড় অংশ বাগেরহাট জেলার মধ্যে হলেও আমাদের সেখানে কোন কর্তৃত্ব নেই। বিষয়টি সুন্দরবন বিভাগ ও কোস্টগার্ড দেখভাল করছে।
এব্যপারে কোষ্টগার্ডের দক্ষিন জোনের ভারপ্রাপ্ত জোনাল কমান্ডার হাসান জানান, বিষয়টি তাদের মৎস্য বিভাগ থেকে জানান হয়নি। তবে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় তাদের যে সকল ষ্টেশন রয়েছে, এব্যাপারে তাদেরকে নজরদারী করার জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।