সংস্কারের অভাবে এক বছর ধরে বাগেরহাটের প্রায় সাড়ে ৩শ’ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পড়ে আছে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায়।
পরিত্যক্ত ঘোষণার পর বছর পেরুলেও এসব বিদ্যালয় ভবনগুলোতে শুরু হয় নি সংস্কার বা পূর্ণ নির্মান কাজ। ফলে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে পাঠদান।
দির্ঘ্য দিনে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনগুলো মেরামত বা সংষ্কার না হওয়ায় রোদ-বৃষ্টির মাঝে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তবে ঝুকিপূর্ণ এসব বিদ্যালয় প্রধানদের দাবি বিষয়টি বারবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও কোন সমাধান পাননি তারা।
আত্মংঙ্কিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিবাকরা। তাদের দাবি অবিলম্বে স্কুল ভবন গুলো সংঙ্গার করে বিদ্যালয় গুলোকে সাভাবিক পাঠদানে পরিবেশ নিশ্চিত করা।
বাগেরহাটের ১ হাজার ১২১টি প্রাথমিক ভবনের বর্তমান অবস্থান নিয়ে বাগেরহাট ইনফো ডটকমের সরজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সূত্র মতে, বিশ্ব বিবেককে স্তম্বিত করে দেওয়া সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাগেরহাট জেলার সহস্রাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সাড়ে ৩শ’ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করে তা পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়ে। সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয় ভবন গুলো ব্যবহার না করতে।
বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলায় মোট এক হাজার ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৩৪৯টি বিদ্যালয়কে গত বছর ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।
যার মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৩৯টি, ফকিরহাট উপজেলায় ২৯টি, মোল্লাহাট উপজেলায় ১৯টি, চিতলমারী উপজেলায় ১৫টি, কচুয়া উপজেলায় ২০টি, শরণখোলা উজেলায় ১৬টি, রামপাল উপজেলায় ১২টি, মংলা উপজেলায় ২৭টি এবং মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ১৭২টি রয়েছে। এরমধ্যে হতে গোনা মাত্র কয়েটি বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে সংস্কার কাছ।
তবে, সরজমিন জেলার কয়েটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত ঘোষনা করা এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের কোন কোনটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফাটলধরা ভবনে চলছে পাঠদান। আবার কোন কোনটি একেবারেই ব্যবহার অনুপোযোগি হয়ে পড়ায় বিদ্যালয় মাঠে টিনশেড তৈরী করে গত এক বছর ধরে চলছে পাঠদান।
শহরের বাসাবাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, তিন তলা ভবনটির পিলার, বিম ও দেয়ালে অসংখ্য ফাটল, পলেস্তার খসে খসে পড়ছে। ভবনের নীচতলার বারান্দার লিংকটেলের (লিন্টন) বিম নীচের দিকে নেমে এসে গ্রিল বাঁকা করে ফেলেছে।
ভবনের বাইরের দিকের কলামগুলোতে (নীচ থেকে তিন তলা পর্যন্ত) লম্বা ফাটল ধরেছে। ফেটেছে ছাদের নীচের বিমগুলোও। দোতলায় ওঠার সিঁড়ির কাছে বিম ফেটে গেছে। দোতালার বারান্দার বিম ফেটে ভেতরের মরিচা ধরা রড বের হয়ে এসেছে। সেখানে রডের সাথে শুধুই সিমেন্ট-বালুর পলেস্তরা। ঢালাইয়ের সাথে নেই ইটের খোয়া।
তবে, এক বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা শহরের বাসাবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের একটি কক্ষে দেখা গেছে বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে। অথচ এই স্কুলের অবিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদানে অস্বীকৃতি জানালে শিক্ষকরা গত বছরের ৫ জুন সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে ওই ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন।
এব্যাপারে বাসাবাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মনিরুজ্জামান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা হবার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের খেলার মাঠে টিনশেডের একটি ঘর তৈরী করে। সেখানেই তাদের নিয়মিত ক্লাস হয়।
ঝুকি পূর্ণ ভবনে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে তার দাবি, তারা সাধারনত এখানে ক্লাস নেন না। শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারনে এদিন ওই ভবনে একটি ক্লাস নেওয়া হয়।
একই অবস্থা বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের বাদেকাড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। একতলা টিন শেড ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়ায় তা পরিত্যক্ত ঘোষনা করার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ খেলার মাঠে টিনশেডের একটি ঘর তুলে সেখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী ছাদিয় আক্তার ও নাদিয়া আক্তার বাগেরহাটইনফো.কমকে বলেন, বর্ষা কাদার মাঠের ভেতরে তৈরী করা টিনশেডে বসে ক্লাস করতে হয় তাদের। ছোট শেডটিতে তাদের ক্লাসের জায়গা। তাই পাশের স্কুল সংলগ্ন একটি ক্লাব ঘরে তাদের ক্লাস হচ্ছে।
বাদেকাড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিন আক্তার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, গত এক বছরেও তাদের স্কুল ভবন সংষ্কার করা হয়নি। তাছাড়া এখনও নতুন ভবন নির্মান বা সংঙ্কাররে কোন উদ্যোগ নাওয়া হয়নি। দ্রুত তাদের বিদ্যালয় ভবনটি সংঙ্কার অথাবা নতুন ভবন নির্মানের দাবি জানান তিনি।
এব্যাপারে বাগেরহাটের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারভীন জাহান বাগেরহাটইনফো.কমকে বলেন, জেলার ঝুকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন গুলোকে সনাক্ত করে সেখানে পাঠদানের জন্য সাময়িক বিকল্প ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। অচিরে ঝুকি পূর্ণ এসব বিদ্যালয় ভবন গুলোকে প্রযোজনীয় সংঙ্কার এবং নতুন ভবন নির্মন করা প্রয়োজন। তা না হলে দিন দিন এ সংখ্যা আরো বাড়বে।
এব্যাপারে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করন এবং ঝুকিপূর্ণ বিদ্যালয় গুলোর তালিকা প্রদান করা হয়েছে। প্রযোজনিয় বরাদ্দ পেলে সেগুলোতে সংঙ্কার ও নতুন ভবন নির্মানে কাজ শুরু করা যাবে।