ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দায়িত্বরত অবস্থায় এক শিক্ষিকাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত সেই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মু. আবদুল অদুদ স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবদের এ বিষয়ে নির্দেশনার চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ও আ’লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ ছাড়াও রামপাল থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
২০১৪ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রমে তথ্যসংগ্রহকালে রামপাল উপজেলার বড় কাটলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকনকে পেড়িখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল মারধর করেন। যা সে সময় বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়।
এ ঘটনায় তথ্য সংগ্রহকারী বেগম খাদিজা ইয়াসমিনের স্বামী মোঃ রবিউল আলম অভিযোগ করলে গত ১০ জুলাই রামপাল উপজেলার সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মু. আবদুল অদুদ স্বাক্ষরিত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে বলে ওই চেয়ারম্যান জানান। কিন্তু পরবর্তীতে চেয়ারম্যান তার ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি অস্বীকার করেন অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন তার নয় বলে জানান।
অন্যদিকে, তথ্যসংগ্রহকারী শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকনকে চেয়ারম্যান বাবুল নানাভাবে লাঞ্ছিত করছেন বলে লিখিত অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় চেয়ারম্যান বাবুলের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওই চিঠির অনুলিপি মহাপুলিশ পরিদর্শক, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, রামপাল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রামপাল থানার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।
এবিষয়ে তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষিকার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকন শনিবার সকালে মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, পেড়িখালী ইউপি চেয়্যারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল বাবুল স্থানীয় মজীদ মীর নামের এক ভোটারের স্থান পরিবর্তনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজে নিয়োজিত শিক্ষিকা তার স্ত্রী খাদিজাকে নির্দেশ দেয়। এ বিয়য়ে ওই শিক্ষিকা চেয়ারম্যানকে তার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ভোটার তালিকায় নাম স্থানান্তর করার ক্ষমতা নির্বাচন অফিসের জানিয়ে তাকে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ করলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
এরপর গত ১৪ জুন দুপুরে চেয়ারম্যান খোকনের দোকানে ঢুকে খাদিজাকে কিল ঘুষি ও লাথি শুরু করে। একপর্যায়ে স্ত্রীকে বাঁচাতে তিনি এগিয়ে গেলে তাকেও চেয়ারম্যান বেধড়ক মারপিট শুরু করে।
এ সময় শিক্ষিকা খাদিজা ইয়াসমিন দৌড়ে পাশ্ববর্তী রেজাউলের বাড়িতে গেলে সেখানে ঢুকে চেয়্যারম্যান পূনরায় মারপিট করে। পরে স্থানীয়রা তাদের গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এঘটনায় রামপাল থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়।
তিনি কিছুটা সুস্থ্য হয়ে এলাকায় ফিরলে চেয়ারম্যান বাবুল ও তার বাহিনী তাকে বাগেরহাট আদালতে গিয়ে মামলাটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে এ্যাফিডেভিট করার জন্য একের পর এক চাপ দিতে থাকে। নিরুপায় হয়ে তিনি স্বপরিবারে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। এখন তিনি এলাকায় ফিরতে পারেননি।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, তার কিছু আত্মিয়কেও ভয়ভীতি দেখিয়ে চেয়াম্যানের পক্ষে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে বাধ্য করছে। নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন তদন্তের সময় চেয়ারম্যান ও তার বাহিনীর লোকজন প্রভাব বিস্তার করে নিরপেক্ষ তদন্ত ব্যহত করছে।
রামপাল থানায় দায়ের করা ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই জাহাঙ্গীর প্রত্যক্ষ ভাবে চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়েছেন। তাকে না জানিয়ে মামলার তদন্ত ও চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
নির্বাচন কমিশনের এই আদেশে তিনি কিছুটা সস্তি পেয়েছেন বলে জানান। তবে, তদন্তকারী কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে রামপাল থানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) আবু দাউদ খান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার কথা তিনি শুনেছেন। তবে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে লিখিত কপি পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) নিজামুল হক মোল্যা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এবিষয়ে দাপ্তরিক কপি পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।