মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী এই দেশের নারী পুরুষদের উপর যে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে তাই এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বেশি বেশি করে জানাতে হবে। এই জন্য জেলায় জেলায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও ঐতিহাসিক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের মানুষের উপর কি অত্যাচার নির্যাতন হয়েছে তার সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যাতে জানতে পারে সেজন্য দেশের বিভিন্ন জেলার গণহত্যার স্থান, টর্চার সেলগুলোকে চিহ্নিত করারও দাবি করেন তিনি।
বুধবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে ১৯৭১ গনহত্যা, নির্যাতন গনকবর চিহিৃতকরণ বিষয়ে বাগেরহাটের সুধী সমাজের সাথে মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোন সরকারই মুক্তিযুদ্ধে গনহত্যা নির্যাতনের ইতিহাস নিয়ে যাদুঘর করেনি। এর জন্য মুক্তিযুদ্ধের লোকজনেরাই দায়ী। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা, ঐতিহাসিকরা কখনোই মুক্তিযুদ্ধে গনহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেনি। ইতিহাস লিখতে গিয়ে বিরত্বের বিষয়টি বেশি তুলে ধরা হয়েছে বেশি। মানুষ বেশিদিন বিরত্বের বিষয়টি মনে রাখে না – রাখে বেদনার ও কষ্টের।
তাই রিক্সাওয়ালা থেকে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা আজ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ঠাটটা করে। মুক্তিযুদ্ধ আজ হাসি তমাসার বিষয়ে পরিনত হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রঙ্গগে তিনি বলেন, এ সরকারের আমলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া – প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে আন্তরিক থাকায় তিনি বিচার পাবার বিষয়ে আশাবাদী। তবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের কাঠামোগত যে দুর্বলতা আছে সে বিষয় আইনমন্ত্রী ও এটার্নি জেনারেল খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি আশা করেন।
তিনি আরো বালেন, পৃথিবীর যেসব দেশে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে সেসব দেশের গণহত্যার বিষয়টি ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের গনহত্যার বিষয়টি মুছে ফেলা হয়েছে। তাই গনহত্যার বিষয়টি নিয়ে সকলকে কাজ করতে হবে।
এসময় খুলনায় বাংলাদেশের প্রথম গনহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও যাদুঘর উদ্বোধন করা হয়েছে জানিয়ে বাগেরহাটেও এমন যাদুঘরের দাবি জানান।
বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবুল সরদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অনান্যের মধ্যে বক্তব্য করেন – ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির খুলনা জেলা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম, গনহত্যা, নির্যাতন আর্কাইভ জাদুঘর খুলনার ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হুমাউন কবির ববি, সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, সরকারি পিসি কলেজের অধ্যক্ষ সুকন্ঠ কুমার মন্ডল, মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল জলিল, মানিক লাল মজুমদার, এ্যাডভোকেট সীতা রানী দেবনাথ, ফররুখ হাসান জুয়েল, শরিফা হেমায়েত, পারভিন আহমেদ, মিলন কুমার ব্যর্নাজী, জাহিদুল ইসলাম যাদু প্রমুখ।
মতবিনিময় সভা থেকে জানা হয় আগামী ২৫ ও ২৬ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাগেরহাট জেলার যেসব স্থানে গণহত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছে সেসব বিষয় তুলে ধরে দুু’দিন ব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।