বাগেরহাটে এক নারীর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ এবং ধর্ষণ চেষ্টা করার অভিযোগে মোশাররফ হোসেন নামে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার দুপুরে বাগেরহাটের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মোহা. মহিদুজ্জামান ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর এ নির্দেশ দেন।
এসআই মোশারফ হোসেন ২০১০ সালে বাগেরহাট মডেল থানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি গোপালগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক পদে কর্মরত আছেন বলে গোপালগঞ্জের ডিবির ওসি আলিমু হক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি খুলনা জেলার দীঘলিয়া উপজেলার মহিষদিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৩১ মার্চ রাতে দুই কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার রণবিজয়পুর এলাকার ‘জাহেদা আবাসিক হোটেলে’ গিয়ে তার মালিক জাহেদা বেগমের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এসময় হোটেল মালিক জাহেদা বেগম চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সদর থানার তৎকালীন এসআই মোশারফ তার শ্লীলতা হানীর চেষ্টা করে এবং ক্ষিপ্ত হয়ে জাহেদা ও হোসেন খাঁ নামে এক বোর্ডারকে ধরে থানায় নিয়ে যান। এরপর তিনি আমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়।
ভুক্তভোগী হোটেল ব্যবসায়ী জাহেদা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের রনবিজয়পুর এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক হোটেল ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ২০১০ সালের ৩১ মার্চ রাতে বাগেরহাট মডেল থানার তৎকালীন এসআই মোশাররফ হোসেন সঙ্গীয় দুইজন ফোর্স নিয়ে আমার মালিকানাধীন আবাসিক হোটেলে আসেন।
এ সময় তিনি এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ও হোসেন খাঁ নামে এক বোর্ডারকে ধরে থানায় নিয়ে যান। এরপর তিনি আমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠান।
জাহেদা বেগম আরো বলেন, আমরা জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ওই পুলিশ কর্মকর্ত আবার আমাদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আমাদের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য ১ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে আদালতে আমাদের নির্দোষ উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এর কিছুদিন পরে তিনি আমার হোটেলে এসে আবার ঘুষ দাবি করলে আমি ঘটনাটি পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমি ওই বছরের ২৭ এপ্রিল বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি লিখিত অভিযোগ করি।
জাহেদার আইনজীবী অ্যাড. মো. নুর মোহম্মদ উকিল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে ঘুষের বিষয়টি তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন। দুদকের খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন ঘুষের বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তে ঘুষ গ্রহণের সত্যতা না মেলায় ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এরপর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় আদালত চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং ৩ সেপ্টেম্বর গেজেট নোটিফিকেশন জারি করেন।
ওই গেজেট জারির পর সোমবার দুপুরে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানালে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।