‘দীর্ঘ ২ মাসের বেশি হাসপাতালে আমি। আমার রোগের নাম Acute Lymphoblastic Leukemia সংক্ষেপে ALL। এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার। ডাক্তার বলেছিলো, কেমোথেরাপি দিলে সুস্থ হবো। প্রথম কেমোথেরাপি দিলাম। প্রথম সার্কেল শেষে বোন ম্যারো স্টাডি করে ডাক্তার বললো, রিপোর্ট খারাপ আসছে। কেমোথেরাপিতে কোনো কাজ করেনি।
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন দরকার। যার জন্য যাওয়া দরকার ইন্ডিয়া। খরচ হবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এতটাকা কে দেবে? বাবা তো কবেই ফেলে চলে গেছে। আমি নাকি তার টাকা-পয়সা নষ্ট করছি।
আমার মা অনেক ধার দেনা করে আমার চিকিৎসা চালাচ্ছেন। সত্যিই আমার মা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। প্রতিটা দিন আমার জন্য অনেক কষ্ট করেন। আমার আত্মীয় স্বজনরা অনেকেই কোটিপতি আবার অনেকেই লাখপতি। কেউ একটা টাকা দিয়ে হেল্প করলো না। সবাইকে চিনলাম। নিজের বাবাকেও চিনলাম। সবাই টাকাকে বড় মনে করে। আমার জীবনের মূল্য আমার মা ছাড়া আর কারো কাছে নেই। মজার বিষয় কি জানেন? আমার দাদীকে আমি খুব ভালোবাসতাম। হ্যাঁ, বাসতাম। কিন্তু সে নিজে একটি বারের জন্যও আমার কাছে ফোন করে খোঁজ খবর নেয়নি।
এখন আর কাউকে ভালোবাসি না মা ছাড়া। কাল আবারো বোন ম্যারো চেক করবে। রিপোর্ট যদি একটু ভালো আসে এই আশায়। কিন্তু রিপোর্ট ভালো আসার সম্ভাবনা কম। আর আসলেই বা কি হবে, আমার লিভারে সমস্যা আছে।
কেমোথেরাপি দিলে লিভার নষ্ট হয়ে দ্রুত মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাচ্ছি। আর হয়তো চিকিৎসা করানো হবেনা। প্রথম কেমোতে কাজ হয়নি ঠিকই, কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবই হয়েছে। পা দুটো চিকন হয়ে গেছে। হাড় ছাড়া কিছুই নেই। হাটতে পারিনা ঠিকমতো। আরো নানা সমস্যা। বাড়ি গিয়ে আল্লাহর নামে পড়ে থাকবো। আল্লাহ যে কয়দিন বাঁচান।
পরিশেষে আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্য। এমন মা পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, মায়ের সেবা করার সুযোগ পেলাম না এবং মায়ের সাথে বেশিটা সময় কাটাতে পারলাম না।
আর হ্যাঁ, আমি জীবিত থাকতে যারা আমার খোঁজ খবর নেয়নি, আমি মারা গেলে আমার লাশ দেখার অধিকারও তাদের নেই। সব আত্মীয় স্বজনদের চিনে গেলাম। তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথা, ‘তোমরা টাকা পয়সা নিয়ে কবরে যেও’।
আর বাবার উদ্দেশ্যে বলি, ‘আপনার বয়স তো প্রায় ৪৫ বছর। আর আমার ১৯। আজ আপনার টাকা ছিলো। আপনি টাকাকে বড় মনে করলেন। পারলে আর একটা ছেলে মানুষ করে আমার মত বানিয়ে দেখান। আর বিশ বছর পর আপনার বয়স হবে ৬৫। মনে রাখবেন, আপনি আজীবন বাচবেন না। আপনার জন্য ও আল্লাহ মৃত্যু বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। ভালো থাকবেন। পারলে অভিশাপ দিবেন না’।
না এটি কোন গল্প বা অভিমানি কাব্য নয়। ক্যান্সার আক্রন্ত বাগেরহাটের মেধাবী ছাত্র বাঁধনের একটি ফেসবুক স্টাটাস। গত ১৫ জুলাই বাঁধন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক এ্যাকাউন্টে ১১টা ১৭ মিনিটে এই স্টাটাস দেয়।
মো. তাবিবুর রহমান বাঁধন বাগেরহাট সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বেমরতা গ্রামের মিজানুর রহমান ও লিপিয়ারা বেগমের ছেলে।
ছোট বেলা থেকেই বাঁধন ছিল অতান্ত মেধাবী। ২০১১ সালে এসএসসি সে মেধার স্বাক্ষরও রাখেন সে। বাগেরহাট সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ওই বছর জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হয় সরকারি পিসি কলেজে। এর পর সেখানে চলছিল তার পড়া শুনা।
কিন্তু গত বছর (২০১৩ সালে) এইচএসসি পরীক্ষা চলাকলীন ৪টি পরীক্ষা দেবার পর গুরুত্ব অসুস্থ হয়ে পড়ে তাবিবুর রহমান বাঁধন। এর পর চিকিৎসায় ধরা পড়ে বাধনের ব্লাড ক্যান্সার।
ডাক্তাররা বাঁধনের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নেয়ার পরামর্শ দেন। তাতে দরকার প্রায় চল্লিশ লাখ।
নিজেদের একটি বাড়ি থাকলেও তা বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা নিয়ে বাবা মিজানুর রহমান উধাও। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাঁচার ইচ্ছা তার। কিন্তু তাকে চিকিৎসা সহায়তা না দিয়ে ছেড়ে গেছেন তার বাবা। তাই অভিমান করে বাবার উদ্দেশে লিখেছিলেন- ‘মনে রাখবেন, আপনিও আজীবন বাঁচবেন না’।
বাবার ধারনা ছেলে বাঁচবে না, তাই টাকা নিয়ে চলে গেছেন বলে মনে করেন বাধনের মা লিপিয়ারা।
বাবা চলে গেলেও মা ও তার সহপাঠীরা মুখ ফিরিয়ে নেয় নি। তারা বাঁধনের বাচাতে টাকা জোগাড়ের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। সহযোগিতা চাচ্ছেন বিত্তবানদের কাছে।
বন্ধু, সহপাঠী, শিক্ষকসহ অনেকেউ হাত বাড়াছেন তার চিকিৎসায়। কিন্তু এখনও দরকার অনেক টাকা।
বাঁধন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরান বিল্ডিং এর ৯ তলার ২৮ নং বেড ভর্তি। ইতোমধ্যে তার দ্বিতীয় কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়টি দেওয়ার আগে লিভার চেক করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সর্বশেষ ২৩ আগস্ট ২০১৪ তারিখে ফেসবুকে (https://www.facebook.com/badhon96) বাঁধন লেখে, “জীবনে কোনো দিনও এতো কষ্ট হয়নি। জানি, মৃত্যুর সময় আরো বেশী কষ্ট হবে। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।”
সবার ছোট বড় সহায়তা আর ভালোবাসা বাঁধনকে বাঁচাতে পারে।
বাঁধনকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা-
লিপিয়ারা বেগম
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি:, বাগেরহাট শাখা
হিসাব নম্বর – ২০৫০১৮০০২০১১১৪৯১৩।
মোবাইল- ০১৮১১৯৩৬৬৯৩, ০১৯১৩৬৫০৭৬৫