নিখোঁজ হবার পর ৬ দিন পেরুলেও খোঁজ মেলেনি বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হাসানের (২৭)।
কে বা কারা সাব্বিরকে নিয়ে গেছে সে ব্যাপারে তার পরিবারের কেউই নিদৃষ্ট করে কিছু বলেতে পারছে না। তবে স্বজনদের অনেকের দাবি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে অপহরণ করেছে।
সাব্বির সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের নওয়াপাড়া গ্রামের প্রয়াত মো. আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে এবং জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
সাব্বিরের পরিবার জানায়, গত বৃহস্পতিবার (২১ অগাস্ট) সন্ধ্যায় খুলনা মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে এক দল স্বশস্ত্র ব্যক্তি তার স্বামীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা সাব্বিরের আর কোন খোঁজ পাচ্ছে না। এব্যাপারে পরদিন তার স্ত্রী বাগেরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও(জিডি) করেছেন।
সাব্বিরের স্ত্রী রেশমা আক্তার মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, তাঁর স্বামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি ইজিবাইকে চড়ে খুলনা শহরের নিউমার্কেট এলাকার ‘সেফ এন্ড সেফ’ নাকে একটি দোকানে যান। সেখানে পৌছালে একটি মাইক্রোবাসে আসা ৭-৮ জন সশস্ত্র ব্যক্তি তাকে অস্ত্রের মুখে চোখ বেঁধে এবং হাতে হাতকড়া পরিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
দলটির মধ্যে দুজনের পরনে ছিল পুলিশের পোশাক। এ ছাড়া তাঁদের সবার হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে নিয়ে যাতে পারে বলে ধারণা তাদের। তবে এখন পর্যন্ত কোন বাহিনীই তাকে গ্রেফতারের বিষয় স্বিকার করে নি।
সাব্বিরের স্ত্রী আরও বলেন, পরে ওই ইজিবাইকের চালকের মাধ্যমে তিনি এ ঘটনা জানতে পারেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে স্বামীর সন্ধান না পেয়ে তিনি শুক্রবার বাগেরহাট মডেল থানায় একটি জিডি করেন।
এদিকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সুজাউদ্দিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক তানু ভুইঞার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া অনতিবিলম্বে সাব্বিরকে জনসমক্ষে হাজির করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাব্বিরের বিরুদ্ধে মারামারি, অবৈধ অস্ত্র বহন ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সদর থানায় অন্তত চারটি মামলা আছে। কয়েক বছর আগে অবৈধ পিস্তলসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এর পর তিনি ‘পিস্তল সাব্বির’ নামে পরিচিতি পান। প্রায় চার মাস আগে তিনি সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ সহিদকে কুপিয়ে জখম করেন।
সাব্বিরের স্বজনরা বলছে, গতকাল (সোমবার) সন্ধায়ও বাগেরহাটে একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যান। এর পর তারা হসাপাতালে সে লাশটি সাব্বিরের কিনা সনাক্তের জন্য যান তারা। পরে লাশটি সাব্বিরের নয় বলে নিশ্চিত হন।
এমনি দেশের অনান্য স্থান থেকেও তাদের কাছে এমন খবর দেওয়া হচ্ছে। যার জন্য তারা মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়ছেন। প্রশাসনের প্রতি তারা নিখোঁজ সাব্বিরের সন্ধানের জন্য মিনতি জানান।
তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে করা এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে রেশমা বলেন, ‘রাজনীতি করার কারণে আমার স্বামীকে বিভিন্ন সময়ে মামলায় জড়ানো হয়। সবগুলো মামলায় তিনি আদালতের নির্দেশে জামিনে আছেন। অপরাধ করে থাকলে তাঁকে আইনের হাতে সোপর্দ করা হোক।’
এব্যাপারে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী আজম খান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সাব্বিরের বিরুদ্ধে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে জখম করাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে গেফতারি পরোয়ানা ভুক্ত আসামি। পুলিশ তাকে খুঁজছে।
তবে সাব্বির অপহরণে বা নিখোঁজের বিষয়ে কিছু তাদের কিছু জানা নইে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে সাব্বির নিখোঁজের ব্যাপারে জানতে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মেদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি এ প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করে নি।