এক গৃহবধুকে এসিড নিক্ষেপের অপরাধে বাগেরহাটে তিন ব্যক্তিকে ১৪ বছরের কারাদন্ডাদেশ এবং মামলার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি)সহ ৩ কর্মকর্তাকে তিরস্কার করেছেন আদালত।
রোববার দুপুরে বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ এবং এসিড অপরাধ দমন ট্রাইবুনালের বিচারক এস এম সোলায়মান এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ এর ৫খ/৭ ধারায় এ রায় প্রদান করেন।
রায়ে দন্ডাদেশ প্রাপ্ত ৩ আসামির প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং আইনের ১০ ধারায় অভিযুক্ত আসামিদের সকল প্রকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্টের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত করে নিলামে বিক্রীর করে সেই টাকা ঘটনার শিকার গৃহবধূ রওশন আরা সুমিকে দেয়ার জন্য বাগেরহাটের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয় ট্রাইবুনাল।
দন্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন- বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার লকপুর ইউনিয়রেন জড়িয়া মাইককুমড়া গ্রামের মৃত আব্দুর ছালাম মোল্লার ছেলে মোল্লা মাসুদ রানা (৩১), এই এলাকার মকবুল শেখের ছেলে হান্নন শেখ (৩৪) এবং উপজেলার টাউন নোয়া পাড়া গ্রামের জব্বার উচস্থার ছেলে মস্তফা উচস্থা (৩৪)।
আসামিদের সকলে পলাতক থাকায় ট্রাইবুনাল তাদের অনুপস্থিতিতে আজ রায় প্রদান করেন। তবে, উচ্চ আদালতের (হাইকোর্টের) স্থগিত আদেশ থাকায় ট্রাইবুনাল অভিযুক্ত আরেক আসামি হালিম শেখের বিচার করেন নি।
ট্রাইবুনাল রায়ে পুলিশের তিন কর্মকর্তার বিষয়ে উল্লেখ করেন যে, ‘সুস্পষ্ট দালিলিক, মৌখিক ও বিশেষজ্ঞ মতামত থাকা সত্ত্বেও ঐ পুলিশ কর্মকর্তারা যে ভাবে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) প্রদান করেছে তা অন্যায়, অনভিপ্রেত ও গর্হিত। অদৃশ্য কারণে একাধিকবার তারা এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন যা তদন্তের দাবি রাখে।’
পুলিশের ঐ কর্মকর্তারা হলেন- বাগেরহাটের তৎকালীন পুলিশ সুপার খন্দকার রফিকুল ইসলাম, মামলাটির দু’জন তদন্ত কর্মকর্তা যথাক্রমে ফকিরহাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) অজিত কুমার মিত্র ও উপ-পরিদর্শক এস এম আকরাম হোসেন।
আদালতের ঐ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহা-পরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশসহ মামলার রায়ের কপি তাদের বরাবরে পাঠানোর আদেশ দেন।
ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
মামলার নথি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাগেরাহটের ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ ইউনিয়নের টাউন নওয়াপাড়া গ্রামের জাকির হোসেনের স্ত্রী রওশন আরা সুমিকে আসামীরা দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করছিলেন। ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর রাতে আসামীরা মেয়েটির ঘরে ঢুকে তাকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে মেয়েটি ডাক চিৎকার করলে আসামীরা মেয়েটির শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে।
এতে তার পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। এই ঘটনায় ১১ নভেম্বর সুমী বাদী হয়ে ফকিরহাট থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা তিন-চার জনের বিরুদ্ধে ফকিরহাট থানায় একটি মামলা করেন।
ঘটনার সাথে আসামীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পেয়ে মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক অজিত কুমার মিত্র ২০১১ সালের ৮ মার্চ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
২০১১ সালের ১০ এপ্রিল বাদীর নারাজি আবেদন শুনানীকালে ট্রাইব্যুনাল বাদী পক্ষের উপস্থাপিত বিভিন্ন দালিলিক, মৌখিক ও বিশেষজ্ঞ মতামত পর্যালোচনা করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার কাজ শুরু করেন। মামলায় দশ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য নেয়া হয়।
বাগেরহাট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশুলী শেখ মোহম্মদ আলী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পুলিশের গাফিলতির কারণে বাদীপক্ষ যখন সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন তখন আদালত সুনির্দিষ্ট প্রমাণগুলো বিশ্লেষণ করে মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার শুরু করেন। আদালতের রায় অত্যন্ত যুক্তিসংগত ও সঠিক বলে তিনি জানান।
ঘটনার শিকার ও এই মামলার বাদী রওশন আরা সুমি রায় ঘোষণার পর বাগেরহাট আদালত চত্ত্বরে বসে আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আসামিরা পুলিশকে প্রভাবিত করে আমাকে ন্যয় বিচার থেকে বঞ্চিত করেছিলো। কিন্তু বিচারকের বিচক্ষনতায় আমি সুবিচার পেয়েছি।
তিনি অবিলম্বে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান।