খুলনা-মংলা সড়কের পাশে ফয়লা এলাকায় ফাঁকা পড়ে আছে ৯৫ একর জমি। সেই জমিতে ঢোকার পথে সাইনবোর্ডে লেখা ‘খানজাহান আলী বিমানবন্দর’। আর জমিতে চরে বেড়াচ্ছে শত শত গরু-ছাগল।
জমিতে মাটি ভরাটের জন্য আনা ট্রাক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বিমানবন্দরটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। কিন্তু গত দেড় যুগে জমিতে মাটি ভরাট ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
বারবার প্রকল্পের ধরন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেন ‘অপমৃত্যু’ ঘটেছে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের।
প্রায় একই অবস্থা খুলনায় আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ প্রকল্পেরও। গত ৭ বছর ধরে প্রকল্পটি নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছে খুলনার মানুষ। জরাজীর্ণ রেলস্টেশন আর নোংরা পরিবেশের কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগে পড়ছেন হাজারও ট্রেন যাত্রী।
রামপাল উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে ফয়লা এলাকায় বন্দর নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা হয় ৯৫ একর জমি। এরপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ১৯৯৭ সালে শুরু হয় মাটি ভরাট কাজ। প্রকল্পটিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৪ কোটি টাকা। তখন থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মাটি ভরাট ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
২০০১-এ ক্ষমতায় এসে ছোট আকারের পরিবর্তে মাঝারি আকারের বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প নেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। আবার শুরু হয় মাটি ভরাট। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮ বছরে আর কোনো কাজ হয়নি প্রকল্প এলাকায়। চলতি অর্থবছরে বাজেটে প্রকল্পটিতে কোনো টাকা বরাদ্দ নেই।
পরে ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ফয়লা এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখেন। তিনি বিমানবন্দর নির্মাণে প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)।
গত বছর ২৬ নভেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় কুয়েট। প্রতিবেদনে বিমানবন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রথম ধাপে ছোট বিমান ওঠানামার জন্য স্টল এবং দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। স্টল বিমানবন্দর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২৫০ কোটি এবং পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণে ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রস্তাবনা দুটির আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বিনিয়োগ বোর্ড খুলনা কার্যালয়ের পরিচালক নিরঞ্জন কুমার মণ্ডল জানান, কয়েকদিন আগে চীন থেকে একজন বিনিয়োগকারী তার অফিসে আসেন। চীন থেকে ঢাকায় আসতে তার সময় লাগে ৪ ঘণ্টা, আর ঢাকা থেকে গাড়িতে খুলনায় আসতে লাগে ৮ ঘণ্টা। ঢাকা-খুলনা যাতায়াতের এই বিড়ম্বনায় তিনি এ অঞ্চলে বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজী আমিনুল হক মনে করেন, বিমানবন্দর না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য বিমানবন্দর নির্মাণ খুবই জরুরি।
খুলনা নাগরিক ফোরামের চেয়ারপারসন শেখ আবদুল কাইয়ুম বলেন, বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য খুলনার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে।