মানবতারিবোধী অপরাধের অভিযোগে আটক বাগেরহাটের আব্দুল লতিফ, সিরাজ মাস্টার ও আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৫ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন ।
এছাড়া লতিফ তালুকদারের জামিন আবেদনের বিষয়ে আদেশ প্রদানের জন্য আগামী ২৮ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়।
লতিফসহ মামলার অপর দুই আসামি শেখ সিরাজ মাস্টার ও আকরাম হোসেন খাঁনকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
লতিফের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন আসামির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আমার মক্কেল ২০০৯ সালে হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। এরপর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে আদালতের নির্দেশে হাজিরা নিয়ে আসছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল লতিফ তালুকদারের জামিন পাওয়ার যোগ্য। এজন্য তিনি লতিফকে জামিন প্রদানের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রার্থনা করেন।
প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, লতিফ তালুকদার হাইকোর্ট থেকে যে মামলায় জামিন পেয়েছেন, সে মামলার সঙ্গে বর্তমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দাখিলের জন্য সময় দেওয়া আছে। কিন্তু প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এ প্রতিবেদন আগামী ২৫ আগস্ট দাখিল করা হবে।
ইতোমধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে যে মানবাতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রসিকিউশন যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, এর মধ্যে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেন।
এরপর লতিফের জামিনের আদেশের জন্য ২৮ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কচুয়া থানা পুলিশ গত ১১ জুন পলাতক আসামি আ. লতিফ তালুকদারকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। গত ১৯ জুন অপর পলাতক আসামি আকরাম হোসেন খাঁনকে রাজশাহী থেকে মোড়েলগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করে। সর্বশেষ দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত ২১ জুলাই রাত ১১টায় বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশ বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে মৃত মোসলেম পাইকের (তার চাচা শ্বশুর) পরিত্যক্ত খুঁপড়ি ঘর থেকে সিরাজ মাস্টারকে গ্রেফতার করে।
তাদেরকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী আ. লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাগেরহাটের কচুয়ায় শাঁখারিকাঠি বাজারে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ছয়টি সুনির্দিষ্ট অপরাধে ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী মামলার আসামি।
এদের মধ্যে সিরাজ মাস্টার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন এবং তিনি ‘বাগেরহাটের কসাই’ বলে কুখ্যাত।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কচুয়ার শাঁখারিকাঠি বাজারে গণহত্যার শিকার রঘুদত্তকাঠি গ্রামের শহীদ জিতেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে নিমাই চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ২০০৯ সালে কচুয়া থানায় এ তিনজনসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত দল দীর্ঘ তদন্ত শেষে আব্দুল লতিফ তালুকদার, সিরাজ মাস্টার ও খাঁন আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন প্রসিকিউশন।