সুন্দরবনে র্যাব ও কোস্টগার্ডের তিন সদস্যকে হত্যার দায়ে ৬ ডাকাতের মৃত্যুদন্ড এবং ৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন বাগেরহাটের একটি আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এস এম সোলায়মান ৯ বছর আগে ওই ঘটনায় এ রায় ঘোষনা করেণ।
রায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্ত ৭ আসামির প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদনড এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুই আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদন্ড দন্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন- বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গামগাছিয়া এলাকার মৃত লুতফর শেখের ছেলে রফিকুল শেষ, ফজলু শেখের ছেলে কুদ্দুস শেখ ও ইদ্দিস শেখ, সুলতাল শেখের ছেলে বাবুল শেখ, এই উপজেলার খালকুলিয়া এলাকার তাহের ফকিরের ছেলে আলতাফ ফকির ও আব্দুল বারেক শেখের ছেলে ইলিয়াস শেখ।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- একই উপজেলার গাবগাছিয়া এলাকার হাফেজ উদ্দিন শেখের ছেলে রিয়াজুল শেখ, ফজলু শেখের ছেলে আকরাম শেখ, হোসেন শেখের ছেলে আলম শেখ, মৃত ইসতাজ আলী শেখের ছেলে বাদশা শেখ, দেলোয়ার শেখের ছেলে জামাল শেখ ও কামাল ওরফে সুমন শেখ এবং খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হাগলা ডাঙ্গা এলাকার আসলাম শেখ।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলার এজাহার ভুক্ত দুই আসামি আসলাম শেখ ও সামছু শেখকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। তাদের বাড়ি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হাগলা ডাঙ্গা গ্রামে।
রায় ঘোষনার সময় মামলার ১৫ আসমির মধ্যে খালাস প্রাপ্ত বাদে বাকিরা সবাই পলাতক ছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর সুন্দরবনের পশুর নদীর একটি খালে ডাকাতরা (দস্যু) ডাকাতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে তৎকালীন র্যাব-৬ এরে অধিনায়ক মেহেদি হাসাান এবং কোস্টগার্ডের লে. কর্ণেল সিদ্দিক এর নেতৃত্বে একটি যৌথ দল অভিযানে যায়। ঘটনা স্থালে পৌঁছালে রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়।
এক পর্যায়ে র্যাব ও কোস্টগার্ড ডাকাতদের আটক করতে গেলে ডাকাতদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং আসামিরা তাদের নিয়ে নিয়ে নদীতে লাফিয়ে পড়ে।
এর পর থেকে তৎকালীন র্যাব ৬ এর পিসি মো. কাঞ্চন (৪৮) এবং কোস্টগার্ডের এম এইস কবির ও এম এ ইসলাম নিখোঁজ হন। ২ ডিসেম্বর ওই এলাকা থেকে এম এ ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং পরে বাকি দু’জনের ও লাশ পাওয়া যায়।
এঘটনায় র্যাব-৬ এর তৎকালীন ডিএডি মো. মোহাসিন আলী বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের নামে ২ ডিসেম্বর মংলা থানায় মামলা দায়ের করেণ।
মামলা দায়েরের পর আসামি বাদশা ও জামাল পুলিশের হাতে আটক হয়ে ১৬৪ ধারায় স্বিকারক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় এবং বাকিদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেন। তবে, জামিন পাওয়ার পর তারাও পালিয়ে যান।
এর পর ২০০৭ সালের মে মাসের ৮ তারিখে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও মংলা থানা পুলিশের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নাসির উদ্দিন আদালতে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।
আদালত মামলার দির্ঘ্য শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ১১ জন স্বক্ষির স্বাক্ষ এবং তথ্য প্রামানাদির ভিত্তিতে আজ এ রায় প্রাদন করেন।