কথায় আছে ‘বিপদেই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়’। তবে শুধু কথার কথা নয় বাস্তবে এমন বন্ধুতের উদাহারণ সৃষ্টি করেছে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত মেধাবী ছাত্র বাঁধনের সহপাঠীরা।
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত মো. তাবিবুর রহমান বাঁধন বাগেরহাট সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বেমরতা গ্রামের লিপিয়ারা বেগমের সন্তান।
ছোট বেলা থেকেই বাঁধন ছিল অতান্ত মেধাবী। ২০১১ সালে এসএসসি সে মেধার স্বাক্ষরও রাখেন সে। বাগেরহাট সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ওই বছর জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হয় সরকারি পিসি কলেজে। কিন্তু গত বছর (২০১৩ সালে) এইচএসসি পরীক্ষা চলাকলীন গুরুত্ব অসুস্থ হয়ে পড়ে তাবিবুর রহমান বাঁধন।
এর পর চিকিৎসায় ধরা পড়ে বাঁধনের ব্লাড ক্যান্সার।
গত ১৫ জুলাই বাঁধন তার ফেসবুকে লেখে, আজ দীর্ঘ ২ মাস এর বেশী হাসপাতালে আমি। আমার রোগের নাম Acute Lymphoblastic Leukemia সংক্ষেপে ALL। এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার।
ডাক্তার বলছিলো কেমোথেরাপি দিলে সুস্থ হবো। প্রথম কেমোথেরাপি দিলাম। প্রথম সার্কেল শেষে বোন ম্যারো স্টাডি করে ডাক্তার বললো, রিপোর্ট খারাপ আসছে। কেমোথেরাপিতে কোন কাজ করেনি। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন দরকার। যার জন্য যাওয়া দরকার ইন্ডিয়া। খরচ হবে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। এতটাকা কে দেবে?
বাবা তো কবেই ফেলে চলে গেছে। আমি নাকি তার টাকা পয়সা নষ্ট করছি। আমার মা অনেক ধার দেনা করে আমার চিকিৎসা চালাচ্ছেন। সত্যিই আমার মা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। প্রতিটা দিন আমার জন্য অনেক কষ্ট করেন।
নিজের বাবাকেও চিনলাম। সবাই টাকাকে বড় মনে করে। আমার জীবনের মূল্য আমার মা ছাড়া আর কারো কাছে নেই।
বাঁধনের সহপাঠী বন্ধুরা বাগেরহাট ইনফোকে জানায় অসুখ ধরা পড়ার পর তার বাবা বাঁধন, তার বোন ও মাকে ফেলে চলে গেছে।
তাই তো অসুখের যন্ত্রনায় কাতর বাঁধন তার ফেসবুকে লিখেছে, বাবার উদ্দেশ্যে বলি, “আপনার বয়স তো প্রায় ৪৫ বছর। আর আমার ১৯। আজ আপনার টাকা ছিলো। আপনি টাকাকে বড় মনে করলেন। পারলে আর একটা ছেলে মানুষ করে আমার মত বানিয়ে দেখান। আর বিশ বছর পর আপনার বয়স হবে ৬৫। মনে রাখবেন, আপনিও সারা জীবন বাঁচবেন না। আপনার জন্য ও আল্লাহ মৃত্যু বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। ভালো থাকবেন। পারলে অভিশাপ দিয়েন না “
বাঁধন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩য় তলার ১২নং কেবিনে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজন প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রতারণার শিকার হয়ে স্বামী হারানো বাঁধনের মায়ের পক্ষে সম্ভব নয় এতো টাকা যোগাড় করা।
তবে কি অকালেই নিভে যাবে মেধাবী বাধঁনের জীবণ প্রদীপ?
তাই তো কৃতী শিক্ষার্থী বাঁধনকে বাচাঁতে রাস্তায় নেমেছেন তার সহপাঠী বন্ধুরা। শনিবার সকালে প্রায় অর্ধশতাধিক সহপাঠীবন্ধু বাঁধনের চিকিৎসার সহযোগিতার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসতে মানববন্ধন করে।
বাগেরহাট প্রেসক্লোবের সামনের সড়কে বৃত্তবানদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বাঁধনের সহপাঠিরা তাদের বন্ধুকে বাঁচাতে সকলে সাহায্যের অনুরোধ জানান।
মানববন্ধনে সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে রুবাইয়াত মোর্শেদ, চন্দন দীপ মিত্র, আবিদ হাসান, তানভির আনজুম আশিন, জম্মীদ্দাল মারজান, ফজলে রাব্বি, সুদিপ্ত চক্রবত্তীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর তারা শহরের ব্যস্ততম সাধনার মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে অর্থ সংগ্রহ করে।
বাধঁনকে সাহায্যের জন্য রাস্তায় নামা সহপাঠীরা জানায়, আমরা বন্ধুর জন্য কিছু করতে চাই। শুধু সবার একটু খানি সহযোগীতা চাই… হোক না সামান্য কিছু। সামান্য কিছু হয়তো বাঁধনকে আরো কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখবে।
যার যতটুকু সামর্থ রয়েছে সেভাবে তারা নিজেরা আর্থিক সহযোগিতা করেছে। কিন্ত দুরারোগ্য ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় এবার তারা বন্ধুর চিকিৎসার জন্যে রাস্তাায় নেমে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছে।
সমাজে যার যতটুকু সুযোগ আছে সাহায্য করলে বাঁধন আবার সুস্থ হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস বাঁধনের সহপাঠি বন্ধুদের।
বাঁধনকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা-
লিপিয়ারা বেগম
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ, বাগেরহাট শাখা
হিসাব নম্বর – ২০৫০১৮০০২০১১১৪৯১৩।
মোবাইল- ০১৮১১৯৩৬৬৯৩ (বিকাশ)