খালেদার হাতেই মৃত্যু ঘটেছে মংলা উপজেলা বিএনপির। দলের চেয়ারপার্সনের ভুল সিদ্ধান্তে পরপর ৩ বার সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ায় বিএনপি। ফলে বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে খ্যাত এই পোর্ট সিটিতে এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে দলটি।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এই পোর্ট সিটিতে কোন কার্যালয়ই করতে পারেনি বিএনপি। এতোদিন আমার বাড়িই ছিল বিএনপির কার্যালয়। এখন পৌর মেয়রের বাড়িতে চলে সব কিছু। এটা লজ্জার।
তৃণমূল বিএনপির প্রবীণ এ নেতা বলেন, আমার হাত ধরেই এখানে (মংলায়) বিএনপি প্রবেশ করেছিল। কিন্তু চেয়ারপার্সনের জামায়াতপ্রীতি ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বর্তমান নেতৃত্বের সমঝোতায় ক্রমেই মলিন হচ্ছে মংলা বিএনপি। বলা যায়, সারাদেশের মতো এখানেও জামায়াত গিলে ফেলেছে বিএনপিকে।
তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এখন মংলাতে বিএনপির কোন মিছিল মিটিং হয়না। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও এখানে দলীয় কোন কার্যক্রম ছিলনা। যদিও লোকসংখ্যা এবং ভোটের দিক দিয়ে এখানে বিএনপি বেশি। তারপরও কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। দায়িত্ব নেওয়ার মতো নেতৃত্বও তৈরি হয়নি।
তিনি জানান, কমিটি আছে। নেতাও আছে। কেবল কার্যক্রম নেই। দলের সক্রিয় ভূমিকায় আছেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জুলফিকার আলি। তিনি পৌরসভার শতশত কোটি টাকার কাজ করছেন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে।
বিএনপির সরকার হটানো ভবিষ্যত আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, আন্দোলন ঘোষণা হলে নামকাওয়াস্তে কর্মসূচি আসতে পারে, পরিস্থিতি বুঝে। ৫ জানুয়ারির আগেও এমনটা হয়েছে।কেবল মিডিয়াতে প্রচারের জন্য ৫ মিনিটের কর্মসূচি থাকে। সরকারকে চাপ দেওয়ার মতো কোন কিছুই এখানে বিএনপি কোনদিন করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও এর সম্ভাবনা নেই।
এক প্রশ্নের জাবাব বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি জানান, মূলত জেলার (বাগেরহাটের) শক্তিতেই চলে মংলা বিএনপি। এখন সেখানেও তো সভাপতি বাদে আর কেউ রাজনীতিতে সক্রিয় আছে বলে মনে হয়না। এখানে কেউই কারো সঙ্গে আলোচনা করেনা, যোগাযোগ করেনা। এ ক্ষেত্রে যদি কেন্দ্র থেকে সব কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি স্থানীয় নেতৃত্বের মতামতের ভিত্তি করে দেয়, কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে না দিয়ে, তাহলে হয়ত সংগঠন চাঙ্গা হতে পারে।
তিনি বলেন, আন্দোলন হতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে সরকার এরই মধ্যে ৬টি মামলা করে নেতাকর্মীদের দৌড়ের পর রেখেছে। এতে একটি আতংকের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মামলার ভয়ে নেতারা গা বাঁচিয়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় নেতৃত্বের কোন ঐক্যও নেই এখানে।
ভোটের রাজনীতি নিয়ে বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, সংসদ নির্বাচনে গত তিন দফায় এখানে জামায়াতকে এ আসন ছাড়া হয়েছে। অথচ মংলা বিএনপির ঘাটি। হিন্দু-খ্রিস্টান ভোট এখানে প্রায় মুসলিম ভোটের কাছাকাছি। হিন্দু-খ্রিস্টান ভোটাররা তো আর জামায়াতকে ভোট দেবেনা। বিএনপি থেকে যে কাউকে মনোনয়ন দিলেই এখানে সে অনায়াসেই জয়ী হতে পারত।
তিনি বলেন, চেয়ারপার্সন এটা চিন্তা করেননি। তিনিই মংলা বিএনপিকে ডুবিয়েছেন। বারবার জামায়াতকে আসন ছাড়ায় এখানে বিএনপির ভীত দুর্বল হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছে জামায়াত। যদি ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত জিততে পারে তাহলে বিএনপির প্রার্থী কেন চেয়ারম্যান পদে হারলো! এর মানে দাঁড়ায়, বিএনপির কাছ থেকে জামায়াত ভোট নিলেও বিএনপিকে ভোট দেয়না।
তোফাজ্জেল আরো বলেন, এসব কারণে জামায়াতকেও এখন বিএনপি বিশ্বাস করেনা। জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা আসে কেন্দ্র ও বাগেরহাট থেকে। এতে বিএনপির ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য দোষ কেন্দ্রের ও দলের চেয়ারপার্সনের। এছাড়া আন্দোলন সফল না হওয়ার পেছনে জেলা কমিটির ব্যর্থতাও রয়েছে।
তিনি বলেন, আন্দোলনে নেমে আমি যে মরব, জেলে যাবো, আমাকে দেখবে কে? এখানে তো সেই নেতৃত্ব তৈরি হতে দেওয়া হয়নি। আমাদের কোন প্রার্থীও নেই, যে তার নিজের স্বার্থে কর্মীদের পাশে এসে দাঁড়াবে। তাহলে আমি দায়িত্ব নিতে যাবো কেন? আসনটি আমাদের থাকলে একজন নেতা ঠিকই দায়িত্ব নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াত।
তিনি আরো বলেন, একবার আমাদের পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে ডাকা হলো। আমরা সবাই গেলাম। নেত্রী আমাদের খাতা দেখে নাম ধরে একে একে ডাকলেন, খোঁজ খবর নিলেন। উনি (খালেদা জিয়া) আমাদের আব্দুল জলিল মোল্যার কাছে জানতে চাইলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান টাকা আছে? জলিল মোল্যা বললেন, আছে ৩০ লাখ। উনি বললেন (খালেদা জিয়া), ৩০ লাখ টাকায় নির্বাচন হয় নাকি। বাড়ি যান, কাজ করেন। জামায়াত জোট থেকে চলে গেলে নমিনেশন পাবেন।
এই আসন উদ্ধারের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, যদি জামায়াতকে বাদ দিয়ে বাগেরহাট থেকে কোন সক্রিয় নেতাকে প্রার্থী হিসেবে আনা যায়, তাহলেই এ আসন উদ্ধার হতে পারে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে সবাই সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ টিকে আছে। তাছাড়া যাকে জামায়াত থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, সেই প্রার্থী তো কোনদিনই এলাকায় আসেন না। তাই বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে তখনো ক্ষমতা ভোগ করে সুবিধাবাদীরা। দল যখন বিরোধী দলে তখনো সুবিধা ভোগ করে সুবিধাবাদীরা। দল ক্ষমতায় এলেই তাদের জার্সি বদল হয়ে যাবে।