সুন্দরবন সুরক্ষা ও রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ঢাকা থেকে পায়ে হেঁটে বাগেরহাটের প্রকল্প এলাকায় পৌঁছে সরকার দলীয়দের হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের একদল প্রতিনিধি।
শুক্রবার দুপুরে রামপাল উপজেলার সাপমারী-কাটাখালী এলাকায় নির্মানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সীমানার ভেতরে পুলিশের উপস্থিতিতে ‘মৌলিক বাংলা সাংস্কৃতিক জনপদ’ নামে ওই সগঠনের উপর এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলায় ঐ সংগঠনের অন্তত ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন। এসময় হামলাকারীরা এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের প্রতিবাদ করা ওই সংগঠনের কর্মীদের কাছ থেকে দুটি ক্যামেরা ও কয়েকটি মুঠোফোন কেড়ে নেয় বলে জান গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আহতদের মধ্যে চার জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
‘মৌলিক বাংলা সাংস্কৃতিক জনপদ’ এর উপদেষ্টা ও এই পদযাত্রা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শ্মশান ঠাকুর বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রামপাল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ এবং স্থানীয় রাজনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ডাবলুর নেতৃত্বে ত্রিশ-চল্লিশ জন গ্রামবাসী বিনা উস্কানীতে লাঠিসোটা ও মাছ ধরা দেশী অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়।
তিনি অভিযোগ করেন, দুপুর ১২ টা থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে তাদের কর্মীদের মারধর করার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। পরে বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ তাদের একটি ট্রলারে করে মংলা উপজেলার দিগরাজ এলাকায় পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে বাসে করে তারা খুলনা পৌছে চিকিৎসার জন্য সন্ধ্যায় খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে যান।
সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক সবুজ মনা মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হামলায় আহতদের মধ্যে কুয়াশা (২৭), জাহিদ (২৭), দ্বীপ (২৬), প্রিন্স (৩০) নামে চার জনকে খুমেক-তে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া নাজমুল হাসান (২৭), ঝন্টু (২৮), শ্মশান ঠাকুর (৩২), অসীম কুমার নাথ (৩২), আমর ুল হক (৪৫) ও শুদ্ধ (৩২) নামে অপর ছয় জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন যে, শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে তাদের কোন প্রকার সহযোগিতা করতে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিভিন্ন অচেনা ব্যক্তি তাদের ভয় ভীতি দেখাচ্ছে।
তাদের সংগঠনটি একটি প্রগতিশীল ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠন দাবি করে সবুজ মনা বলেন, তাদের কার্যালয় ঢাকার কাটাবন এলাকায়। তরুণ কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ তরুণ ছাত্র, কর্মজীবি ও পেশাজীবীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের সদস্য। তারা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে এসে বর্বরতার শিকার হয়েছেন।
তবে, রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রউফ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, খুবই অল্প বয়সের কিছু বহিরাগত ছেলে এলাকায় ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিলো বলে স্থানীয়রা আমাকে জানান। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে উপজেলার সব জায়গায় আমাদের দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি ছিলো। কোন অঘটন এড়াতে আমি রামপাল থানা থেকে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং অল্প বয়সী ঐসব অচেনা ছেলেদের এলাকা থেকে চলে যেতে বলি।
তাদের উপর কেউ হামলা করেনি। পুলিশ তাদের নির্বিঘেœ ট্রলারে তুলে দেয়। তারা এখন যে কাহিনী তৈরী করছে তার উদ্দেশ্য আমার কাছে স্পষ্ট না বলে মন্তব্য করেণ তিনি।
এব্যাপারে রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী দাউদ হোসেন জানান, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় কিছু বহিরাগত যুবক স্থানীয় গ্রামবাসীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে যেতে আমার কাছে পুলিশের সহযোগিতা চান। আমি তাকে একদল পুলিশ দিয়ে সহায়তা করি।
পুলিশসহ সেখানে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং পুলিশ ঐ বহিরাগতদের নিরাপদে এলাকা ত্যাগ করতে ট্রলারে তুলে দেয়। ঐ যুবকদের সম্পর্কে আমাদের কাছে আগাম কোন তথ্য ছিলো না।
কাজী দাউদ হোসেন বলেন, ‘আজ জাতীয় শোক দিবস, একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর দিন। এমন একটি দিনে ঐ যুবকরা এসব কর্মসূচি না নিলে হয়তো এ ধরণের ঘটনা ঘটতো না।’
ঘটনায় পর থেকে তারা বা তাদের পক্ষে কেউ থানায় কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি বলেও জানান ওসি।
প্রসঙ্গত, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারি ও কাটাখালী এলাকায় বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কাছেই বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাছ চলছে। নির্মান কাছ শুরুর আগে থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফলে সুন্দরবনে পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র ধ্বাংস হবে হলে প্রতিবাদ করে আসছে।
এর ধারাবাহিকতায় সুন্দরবনের খুব কাছের এ কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অন্য কোথাও স্থানান্তরের দাবি ও নির্মাণে কার্যক্রম চালিয়ে নেবার প্রতিবাদে “মৌলিক বাংলা সাংস্কৃতিক জনপদ” নামে ঐ সংগঠনটির কর্মীরা গত ৮ আগস্ট ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে রামপালের উদ্যেশে পদযাত্রা শুরু করে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাতে তারা রামপালের রাজনগরে পৌছায় এবং স্থানীয় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত্রি যাপন করে। শুক্রবার সকালে তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা পরিদর্শনে যায়।