সুন্দরবনের করমজলে কুমির প্রজনন কেন্দ্রর কুমির জুলিয়েট ও পিলপিলের ফুটানো ডিম থেকে ৭২টি বাচ্চার জন্ম হয়েছে।
রোববার সকালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন এলাকায় কুমির প্রজনন কেন্দ্রে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় পিলপিলের ৪৮টি ডিম থেকে ৪১টি এবং জুলিয়েটের ৪৪টি ডিম থেকে ৩১টি সতেজ ছানার জন্ম হয়।
করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে লবন পানির প্রজাতির (সল্ট ওয়াটার ক্রোকোডাইল) দুটি মেয়ে কুমির এবং একটি পুরুষ কুমির রয়েছে। পরিচর্যাকারীরা এদের নাম দিয়েছেন পিলপিল, জুলিয়েট ও রোমিও। এদের মধ্যে পিলপিলের বয়স ১৭, জুলিয়েট ও রোমিওর বয়স ২৬ বছর।
এই কেন্দ্রে ভারত থেকে আনা মিঠা পানির প্রজাতির (মার্শ ক্রোকোডাইল) দুটি স্ত্রী কুমিরও রয়েছে। এদের প্রতিটির বয়স ১৮ বছর করে। লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের গড় আয়ু ৮০ থেকে ১০০ বছর।
করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ ও কুমির বিশেষজ্ঞ আব্দুর রব সোমবার সকালে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পিলপিল চলতি বছরের ১০ মে ৪৮টি এবং জুলিয়েট ৪৪টি ডিম দেয়। এসব ডিম সংগ্রহ করে পৃথকভাবে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়। পরিচর্যাকালে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়।
“৯১ দিন পর পিলপিলের ডিম থেকে ৪১টি এবং জুলিয়েটের ডিম থেকে ৩১টি সুস্থ্য বাচ্চা জন্ম নেয়। ভ্রুণের মৃত্যু ও অনিষিক্ত হওয়ার কারণে এবার ২০টি ডিম নষ্ট হয়ে গেছে।
“তবে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ায় ফুটানো বাচ্চার ৮০ শতাংশ স্ত্রী ও ২০ শতাংশ পুরুষ কুমিরের জন্ম হয়েছে। ৩৬ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার পর এসব কুমির ছানাকে নির্ধারিত (চৌবাচ্চা) জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া হবে।”
মি. রব জানান, ২০০৫ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত জুলিয়েটের ডিম থেকে প্রতিবছর বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়েছে। পিলপিল এইবার নিয়ে পঞ্চমবারের মতো ডিম দেয় এবং সেই ডিম থেকে কুমির ছানার জন্ম হয়।
জুলিয়েটের ডিম থেকে ২০০৫ সালে ১৬টি, ২০০৬ সালে ২৬টি, ২০০৭ সালের ২৯টি, ২০০৮ সালে ৩০টি, ২০০৯ সালে ২৭টি এবং ২০১০ সালে ২০টি ও ২০১১ সালে ২৭টি ছানার জন্ম হয়।
তিনি জানান, জুলিয়েটের ডিম পাড়ার সক্ষমতা থাকবে আরো চল্লিশ বছর এবং পিলপিলের সক্ষমতা থাকবে প্রায় পঞ্চাশ বছর।
২০০৫ সাল থেকে গত নয় বছরে জুলিয়েট ও পিলপিলের ৫৭৪টি ডিম থেকে ৩৫৬টি বাচ্চা ফুটেছে। এর মধ্যে ১০১টি কুমিরের বাচ্চা বঙ্গবন্ধু, ডুলাহাজরা সাফারী পার্কসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীখালে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমানে প্রজনন কেন্দ্রে ২৫৫টি কুমির ছানা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ‘সুন্দরবনস বায়োডাইভারার্সিটি কনজারভেশন প্রকল্পের’ আওতায় ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট একর জমির উপর বনবিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারী এই কুমির প্রজনন কেন্দ্র।
সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির নিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। অষ্ট্রেলিয়ার আর্ন্তজাতিক ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সেন্টারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা আব্দুর রব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই কেন্দ্রটি তত্ত্বাবধায়ন করে আসছেন।
২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার জলোচ্ছ্বাসে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে ছোট-বড় ৬১টি কুমির পানিতে ভেসে যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাইরের কিছু বড় প্রাণী ১৮টি কুমিরের বাচ্চা খেয়ে ফেলে।
রোববার জন্ম নেয়া ৭২টি ছানাসহ এই কেন্দ্রে এখন কুমিরের সংখ্যা মোট ২৫৫টি।