মাত্র একজন ডাক্তার দিয়ে চলছে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা কার্য্যক্রম।
সরজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা মেলে এমন দৃশ্যের।
ফলে প্রতিদিন শত শত রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। বাধ্য হয়েই হাঁতুড়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে।
উপজেলার দেড় লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে শরণখোলায় উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ রয়েছে দু’টি সরকারি সাব সেন্টার ও ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ মোট ১৩ জন ডাক্তার থাকার কথা। কিন্তু সেখানে একমাত্র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচও) ছাড়া অন্য কোনো ডাক্তার নেই। স্বাস্থ্য সহকারী নেই ১৩ জন।
এখানকার ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানের পদ শূণ্য ৪ বছর ধরে। দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য রয়েছে ১২ জন ডাক্তারসহ গুরুত্বপূর্ণ ২৬টি পদ। এক্স-রে মেশিনটি বিকল ৪ বছর। ভেঙে পড়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। রোগীদের ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত ফ্যান ও লাইট নেই।
সীমানা প্রাচীর (বাউন্ডারী ওয়াল) না থাকায় অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে হাসপাতালটি। এসব সংকট নিরসনে নেই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। ফলে মারাত্মক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে উপজেলার দেড় লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা।
চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের গৃহবধূ হামিদা বেগম জানান, জ্বর হওয়া তার শিশু ছেলে অলিকে নিয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় এসে দুঘণ্টা ধরে বসে আছি। জানতে পারলাম ডাক্তার সাহেব এসে উপরে ওয়ার্ডে রাউন্ডে আছেন। কখন শিশুকে ডাক্তার দেখাতে পারব, তা জানি না।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সাহা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, হাসপাতালের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খঁসে খঁসে পড়ছে। ফ্যান, লাইট নেই পর্যাপ্ত। বিদ্যুৎ না থাকলে ভুঁতুড়ে বাড়িতে পরিনত হয় হাসপাতালটি। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর থাকা সত্বেও জ্বালানী সংকটে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় সিডরে হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। সেই থেকেই অরক্ষিত হাসপাতালটি।
তিনি আরো জনান, ডাক্তার না থাকায় একাকেই সবকিছু সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একার পক্ষে এতো বড় জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া কোনো মতেই সম্ভব না। দীর্ঘদিন ভঙ্গুর অবকাঠামো মেরামত ও জনবল সংকট নিরসনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি জরুরী ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মো. বাকির হোসেনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, শরণখোলার বিষয়টি আজ সকালে আমি অবগত হয়েছি। আগামীকাল নাগাত সেখানে আরো দু’জন চিকিৎসক যোগ দেবেন। আর চলতি মাসের ৭ তারিখের পর নতুন নিযোগ প্রাপ্তরা যোগ দিলে এ সমস্যর সমাধান হয়ে যাবে।