বাগেরহাটের ব্যাংকিং সেক্টরে গত ক’দিনে চরমপন্থী জনযুদ্ধ বাহিনীর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার সোনালী ও অগ্রনী ব্যাংকের কমকর্তাদের কাছে মোবাইলে কয়েকদিন ধরে চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট (এমএল-জনযুদ্ধ) পার্টি’র শীর্ষ নেতার পরিচয়ে চাঁদা দাবী করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে সোনালী ও অগ্রনী ব্যাংকের ২ জন সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও ১৭ ব্যাংক ম্যানেজারসহ ২০ জন কর্মকর্তার নিকট এই চাঁদা দাবী করা হয়।
এব্যাপারে মঙ্গলবার ব্যাংক দু’টির কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছে।
এদিকে ঘটনায় চাঁদা দাবীর এই ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের পরিবারের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের আতঙ্ক কাটাতে মঙ্গলবার থেকে বাগেরহাটের ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা জোরদার ও পুলিশের নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বাগেরহাট সোনালী ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশুতোষ মন্ডল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সোমবার (১৪জুলাই) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তার অফিসের প্রিন্সিপাল অফিসার ও ১৭ সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে চরমপন্থী জনযুদ্ধের দুই শীর্ষ নেতা শিকদার মহিউদ্দিন ও বিপ্লব বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ১ লাখ থেকে বিভিন্ন অংকের চাঁদা দাবী করে।
তাদের ধার্য্যকৃত চাঁদা না দিলে ব্যাংক কর্মকর্তা ও তাদের সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয় হয়ে বলে জানান তিনি।
সোনালী ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবী করা হয়েছে তারা হলেন, আঞ্চলিক অফিসের প্রিন্সিপাল অফিসার স্বপন গুহ, বাগেরহাট শাখার ম্যানেজার শেখ মুজিবুর রহমান, বাগেরহাট কোর্ট শাখার ম্যানেজার এইচ এম রনী, বাগেরহাট বাজার শাখার ম্যানেজার অর্পনা মন্ডল, ফকিরহাটের ম্যানেজার দেবব্রত বিশ্বাস, চিতলমারীর মো. আব্দুর রব, কচুয়ার মো. হাবিবুল্লাহ খাঁন, মোড়েরগঞ্জের শংকর কুমার রায়, শরনখোলার রায়েন্দার খাঁন মো. ওমর আলী, রামপালের দেবদাস ব্যানাজী, মংলা পোর্টের কৃষ্ণ কান্ড বৈরাগী, মংলা শহরের আহসান আলী, রামপালের গৌরম্ভার মো. ফয়সাল শেখ ও রামপালের গিলাতলা শাখার মো. হুমায়ুন কবির।
একই ভাবে অগ্রনী ব্যাংকের বাগেরহাট আঞ্চলিক অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপ মো. আনোয়ার হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সোমবার দুপুরে ব্যাংকের মোবাইল ফোনে তাকেসহ তার ৪ শাখা ম্যানেজারকে চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির ( এমএল- জনযুদ্ধ) দুই শীর্ষ নেতা শিকদার মহিউদ্দিন ও বিপ্লব নাম পরিচয় দিয়ে অনূরুপ চাঁদা দাবী করে।
তার ব্যাংকে চাঁদা দাবী করা অপর ৪ ম্যানেজার হল কচুয়ার গোয়ালমাঠ শাখার এসপিও মলয় কিশোর বিষ্ণু, মোড়েলগঞ্জের পোলেরহাট শাখার এসপিও দিপঙ্কর কুমার মন্ডল, বাগেরহাট শহরের মুনিগঞ্জ শাখার এসপিও দিপক কুমার কুন্ড ও সদরের যাত্রাপুর শাখার এসপিও মানস কুমার পাল।
তিনি আরো জানান, এদের কাছে দুটি বাংলা লিংকের নাম্বার (০১৯৫৭৫০৩৯০৪ ও ০১৯৫৬০১৮১৫৬) থেকে সোমবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে মোবাইল করে ১ লাখ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবী করা হয়। বলা হয় ওই চরমপন্থী সংগঠনের কিছু সদস্য বিজিবি’র সাথে বন্দুক যুদ্ধে আহত হয়েছে।
তাদের চিকিৎসার জন্য বিপুল অংকের টাকা প্রয়োজন। তাই তাদের ধার্যকৃত চাঁদা দিতে হবে। না হলে ব্যাংক কর্মকর্র্তাসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
এই দুই ব্যাংক কর্মকর্তাই জানান, বিষয়টি পুলিশসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে।
ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও কর্র্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করাছে বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) নিজামুল হক মোল্যা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, দূবৃত্তদের মোবাইলের সূত্র ধরে তাদের চিহ্নিতসহ আটকের জন্য পুলিশের একাধিক টীম ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া ঘটনার পরপর ব্যাংক পাড়ার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বিষয়টি সর্বচ্চ গুরুত্বের সাথে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।