বাগেরহাটের শরণখোলায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডাব্লিউএফপি) একটি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতিসহ শ্রমিকদের মজুরী কেটে রাখার অভিযেওাগ পাওয়া গেছে।
ইআর নামে ডাব্লিউএফপির ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সংস্থা সরকারের এলজিডি ও মুসলিম। শ্রমিকদের অভিযোগ, আড়াই কোটি টাকার মাটির কাজের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যোগসাজসে প্রত্যেক শ্রমিকের কাছ থেকে বিল পাস করানোর কথা বলে ৫০-১০০ এবং মজুরী থেকে ২০০-৩০০ টাকা করে কেটে নিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানান গেছে, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২৫০০ শ্রমিকের কাছ থেকেই বিভিন্ন অজুহাতে তাদের বঞ্চিত করে এলজিডি ও মুসলিম এইডের কর্মকর্তারা প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বুধবার উপজেলার সদরের রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারে বসে টাকা বিতরণের সময় মজুরী কেটে রাখা হলে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।
এসময় উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাছে শ্রমিকরা এসব অভিযোগ করেন। তারা জানান, মাটির মাপ হিসেবে টাকা দেয়ার কথা। কিন্তু তাদেরকে দেয়া হয়েছে দিনের হিসাবে। প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪-৫ দিনের মজুরী কেটে রাখা হয়েছে।
এমনকি বিল করানোর কথা বলে টিম লিডারদের (দলনেতা) মাধ্যমে প্রত্যেকের কাছ থেকে আরো ৫০ থেকে ১০০টাকা নিয়েছেন কর্মকর্তারা। এতে যেমনি তারা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনি আর্তিকভাবেও হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত। এদের মধ্যে আবার পুরুষ শ্রকিদের তুলনায় নারী শ্রমিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তারা জানান।
উপজেলার লাকুড়তলা খাল খননের শ্রমিক কদমতলা গ্রামের মঞ্জু বেগম (৪০) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, “মুই (আমি) নিয়মিত কাম করছি। একদিনও হাজিরা বাদ দেইনাই। কিন্তু মোর বিল থেইকা ৩৩২ টাহা কাইড্যা (কেটে) রাখছে।”
একই গ্রামের আব্দুল হক আকন বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, “মোর ১৮৮০ টাহা বিল ওইছে। কিন্তু মোরে দেছে ১৬৪০ টাহা (টাকা)।”
উত্তর কদমতলা গ্রামের নিত্যনন্দ হালদার, আব্দুল জলিল, আবুল কালাম হাওলাদারসহ কয়েক জন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, এলজিডি থেকে বিল পাস করানোর কথা বলে টিম লিডার আসমা বেগম তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নিয়েছেন। তারা কতটুকু কাজ করেছেন এবং কতটাকা বিল হয়েছে তা কোনো দিনই জানতে পারেননি।
একই এলাকার কুদ্দুস মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, তিনি কাজ করেছেন ১০ দিন অথচ হাজিরা করা হয়েছে ৫ দিনের।
এভাবেই উপস্থিত শ্রমিকরা অভিযোগ করে জানান তাদের ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত করার কথা। এছাড়া কাজেও অনেক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগী এসব শ্রমিকদের।
এব্যাপারে জানতে ডাব্লিউএফপি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জন তাপষের সাথে যোগাযোগ করা হলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি জানান, কাজে কিছু অনিয়ম তার চোখেও ধরা পড়েছে। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
তবে, মুসলিম এইডের ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প কর্মকর্তা মো. নাজমুল হকের কাছে অভিযোগর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে বাধ্য নয় বলে জানান।
আর উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার মিত্র বাগেরহাট ইনফোকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সমপন্ন করতে না পারায় প্রকল্পের কিছু অর্থ ফেরৎ চলে গেছে। তবে শ্রমিকদের মজুরী থেকে টাকা কেটে রাখার বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।