প্রবাদ আছে ‘১৮ মাসে বছর’। ডিলামি বা অলসতার হিসাবে ১৮ মাসে সে বছর হলেও উদ্বোধনের দেড় বছর বা ১৮ মাসেও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বাগেরহাটের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস।
ফলে নিজ জেলায় পাসপোর্ট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাগেরহাটের হাজারো মানুষ।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের তথ্য মতে, প্রতিমাসে গড়ে প্রায় সহস্রাধিক লোক পাসপোর্টের আবেদন করে এ জেলা থেকে।
জেলার পাসপোর্ট প্রার্থীদের সুবিধার্থে ১৮ মাস আগে শহরের একটি ভাড়া বাসায় উদ্বোধন করা হয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বাগেরহাটের। অফিস স্থাপনের তিন মাসের মধ্যেই পাসপোর্ট তৈরির কার্যক্রম শুরু হবার কথা থাকলেও দেড় বছরেও এখানে শুরু হয়নি পাসপোর্ট সেবার কোন কার্যক্রমই ।
তবে, বাড়ী ভাড়া, কর্মকর্ত্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন খাতে প্রতি মাসে সরকারের ব্যায় হচ্ছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালে অক্টোবর থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারির মধ্যে দেশের ৩৩ জেলায় উদ্বোধন করা হয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস । এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাগেরহাট শহরের খারদ্বার এলাকায় ব্যাক্তি মালিকানাধীন একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে উদ্বোধন করা হয় ‘বাগেরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস’।
আধুনিক মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) তৈরির লক্ষ্য নিয়ে অফিসটির যাত্রা শুরু হলেও।
সরেজমিনে বাগেরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, এমআরপি বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির কোনো যন্ত্রপাতিই নেই এখানে।
এছাড়া প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বলতে এখানে আছে শুধু আলমিরা, টেবিল, আর কয়েকটি চেয়ার। নেই কম্পিউটারসহ যেসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তার কোনটিই। এমনকি এমআরপি তৈরির জন্য যে থ্রিফেইজ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন সে বিদুৎ সংযোগও নেই এখানে।
স্থানীয় একটি সূত্র দাবি, অধিকাংশ সময়ই এ পাসপোর্ট অফিসটি থাকে তালাবদ্ধ। কর্মকর্তারা আসেন মাঝে মধ্যে।
অফিস সূত্রে জানা যায়, অফিসটিতে ৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা। অফিস ভাড়া প্রতিমাসে ৩৩ হাজার টাকা। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি মাসে এখানে মোট ব্যায় প্রায় দেড় লাখ টাকা ।
এদিকে, বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের কোনো কার্যক্রম না থাকায় জেলার বিদেশগামী মানুষকে পাসপোর্ট করার জন্য যেতে হয় খুলনায়। নিয়ম অনুযায়ী যিনি পাসপোর্ট করবেন তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দেবেন। তারপর ওই অফিস থেকে একটি তারিখ দেওয়া হবে পরবর্তিতে ছবি তোলা ও আংগুলের ছাপ নেয়ার জন্য।
পাসপোর্টটি ডেলিভারীর দিনও তাকে যেতে হবে ওই অফিসে। এভাবে একজন ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৩ বার সকল কাজ ফেলে রেখে খুলনার ওই পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়। খুলনা পাসপোর্ট অফিসে সিরিয়াল দিয়ে প্রচণ্ড ভিড়ের চাপ সহ্য করতে হয় পাসপোর্ট প্রার্থীদের। শুধু তাই নয় এখানে গিয়ে অনেকেই দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে যান। ফলে গুণতে হয় অনেক বেশি অর্থ।
খুলনা পাসপোর্ট অফিসে বেশি টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করাবার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভূগি অনেকেই।
বাগেরহাট শহরের ব্যবসায়ী তরিকুজ্জামান জানান, তিনি তার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে ভারতে নেবার জন্য খুলনা পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানে গিয়ে পাসপোর্টের কাজ দ্রুত করতে দালালের মাধ্যমে বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে তাকে।
মি. তরিকুজ্জামান বলেন, বাগেরহাটে পাসপোর্ট অফিসটি চালু হলে, আমাদের পাসপোর্টের জন্য অন্য জেলায় ছুটে যেতে হতো না। এতে আমাদের অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হতো।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, প্রতিমাসে গড়ে বাগেরহাট জেলা থেকে সহস্রাধিক লোক পাসপোর্টের আবেদন করে থাকেন।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ খোরশেদ আলম জানান, আমরা আমাদের কার্যক্রমের অনেকটাই এগিয়ে এসেছি। কিছু দিনের মধ্যে এ অফিসে কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হতে পারে।
তবে ঠিক কত দিনে শুরু হবে এ কার্যক্রম তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।