ফজরের আযানের পর নৌকা নিয়ে বাপ বেটার যাত্রা শুরু সুন্দরবনের শেলা নদীর বাইজুড়া খালের উদ্দেশ্যে। ওখানে আগ থেকেই পাতা আছে চরজাল (মাছ ধরার জন্য এক ধরণের বিশেষ জাল)। কিন্তু জালের পাশে যে ওঁৎ পেতে আছে হিংস্রো ক্ষুধার্ত কুমির কে জানতো।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে সুন্দরবনের ওই এলাকায় মাছ ধরতে যায় বাগেরহাটের মংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি গ্রামের জাহাঙ্গীর শেখ (৪০) ও তার ছেলে জাহিদুল শেখ (১৪)।
ছেলেকে নৌকায় রেখে বাবা জাল তুলতে খালের পানিতে নামেন। জালে অনেক মাছ বেঁধেছে খুশীতে আর্তহারা বাব ছেলে দু’জনই। হঠাৎ গুলির বেগে একটি কুমির এসে জাহাঙ্গীরের মাঝা কামড়ে ধরে। এর পর যা ঘটে তা অত্যান্ত হৃদয় বিদারক।
জাহাঙ্গীর শেখের ছেলে জাহিদুল শেখ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বনবিভাগের পাস নিয়ে তারা সুন্দরবনে মাছ ধরতে যায়। জাল তুলতে খালের পানিতে নামার পর তার বাবাকে হটাৎ করে একটি কুমির আক্রমন করে। কুমিরটি তার চোখের সামনে তার বাবাকে টেনে নিয়ে যায়।
এর পর থেকে তাকে (জাহাঙ্গীর শেখ) আর পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, সকাল ৯টার দিকে এলাকায় ফিরে এসে খবর দেন বনবিভাগ ও এলাকাবাসীকে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের লাশ পওয়া যায় নি।
পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ চাঁদপাই) আবুল কালাম আজাদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মংলা চিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম রাসেল জানান, বন বিভাগের নিয়ম মেনে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে কুমিরের খাবারে পরিণত হওয়া জাহাঙ্গীর পেশায় সে জেলে। সুন্দরবনে মাছ ধরে ডাঙ্গায় বিক্রি করে চলে তার সংসার। জাহাঙ্গীরই তার পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যাক্তি ছিলেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের একমাত্র কুমির বিশেষজ্ঞ ও সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র কর্মকর্তা আব্দুর রব বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সুন্দরবনের শেলা নদীর বাইজুড়া খালে কুমিরের উৎপাত বেশি থাকে।
এ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরসহ তিন জেলেকে বনের ওই এলাকা থেকে কুমিরে নিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।