‘সুন্দরবন ভ্রমণ নীতিমালা’য় বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে ভ্রমণের সময় প্রশিক্ষিত ‘গাইড’ সঙ্গে নেবার বিষয়টি।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতকরণ ও বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে নীতিমালা’র খসড়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে বলে জান গেছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সৈয়দ মেহদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য যেন ধ্বংসের মুখে না পড়ে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সুন্দরবন ভ্রমণ নীতিমালা’র খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে নির্দেশনা থাকছে সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার বিষয়ে।”
নীতিমালার আওতায় ওই অঞ্চলের আশেপাশে বসবাসকারীদের ‘সুন্দরবন ট্যুর গাইড’ হিসাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নীতিমালা জারি হবার পর থেকে ভ্রমণকারীরা কেউ গাইড ছাড়া সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।
নীতিমালাটি চূড়ান্ত করতে আগামী ২ জুলাই এবিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসাবে ঘোষণা করে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত ভ্রমণ এবং জলযানগুলো (লঞ্চ ও মাঝারি জাহাজ) থেকে নির্গত তেল সুন্দরবনের পরিবেশ ও পানি দূষণ করছে।”
খসড়া নীতিমালায় প্রতিটি পর্যটকবাহী জলযানে ন্যূনতম একজন করে প্রশিক্ষিত ট্যুর গাইড এবং ৫০ জনের অধিক পর্যটকের জন্য ন্যূনতম দু’জন গাইড রাখতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সুন্দরবনের কিছু রিজার্ভ এলাকায় একসঙ্গে সর্বোচ্চ কতজন যাওয়া যাবে এবং ওই অঞ্চলের কতটুকু ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে সে বিষয়েও নীতিমালায় দিক-নির্দেশনা থাকছে বলে জানা গেছে।
পাশাপাশি সুন্দরবন এলাকায় কোন প্রকার ফিটনেসবিহীন জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে না। সর্বোচ্চ ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের লঞ্চ-জাহাজ ওই এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পাবে বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।
“রাতে সর্বোচ্চ ৭৫ জন এবং দিনে সর্বোচ্চ ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে সুন্দরবনে লঞ্চ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। নীতিমালা অনুযায়ী লঞ্চ চলাচলের রুটও নির্ধারণ করা হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, খসড়া নীতিমালায় পর্যটকবাহী জলযানে জেনারেটরের পরিবর্তে সৌরশক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করে রাত ৯টার পর সুন্দরবনের অভ্যন্তরে জেনারেটর চালানোয় বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়েছে।
“রাতে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে বন বিভাগ নির্ধারিত জলযানের বেশি অবস্থান করতে পারবে না। এছাড়া সুন্দরবন ভ্রমণকালে বনাঞ্চলের যত্রতত্র লঞ্চ ভেড়ানোও যাবে না।” পর্যটকদের কারণে সুন্দরবনের বন্য প্রাণীর ওপর যেন ক্ষতিকর কোনো প্রভাব না পড়ে সেজন্য বিভিন্ন স্থানে সতর্কবার্তা মূলক নির্দেশও থাকছে এ নীতিমালায়।
পাশাপাশি পর্যটকদের বহনকারী লঞ্চে যেসব জিনিসপত্র অবশ্যই থাকতে হবে তার তালিকাও সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। সেই সাথে জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন শব্দযন্ত্র, মাইক, পটকা, বাজি এবং রাসায়নিক দ্রব্য পর্যটকবাহী লঞ্চে রাখা যাবে না বলেও নীতিমালায় খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।
খসড়া অনুযায়ী, পর্যটকদের ব্যবহৃত যে কোনো পরিবেশ দূষণকারী দ্রব্য যেমন- পলিথিন, প্লাস্টিক, কৌটা ইত্যাদি ও খাবারের উচ্ছিষ্ট নদীতে না ফেলে লঞ্চের মধ্যেই তা রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।