সুন্দরবনের বনজীবি বিশেষ করে জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করাই দস্যুদের একমাত্র আয়ের উৎস। দলভেদে এক একটি দস্যু বাহিনীর আয় মাসে প্রায় ৫০ লাক্ষ থেকে ৫ কোটি টাক।
বনের ওপর নির্ভরশীল সাত লাক্ষ পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা হয় এ অর্থ। দালাল ও মহাজনদের মাধ্যমে এ টাকা বেশির ভাগই এখন পরিশোধ করা হয় বিকাশ ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
সুন্দরবনের দস্যু নিয়ে আমাদের বিশেষ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিদিন সুন্দরবনে গড়ে ৪ থেকে ৫শ’ বনজীবী দস্যুদের হাতে জিম্মি হন এবং মুক্তিপণের মাধ্যমে ছাড়াও পান। কিন্তু এ খবর লোকালয়ে আসে কমই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহাজন এবং পরিবারের লোক ছাড়া কেউই বিষয়টি বুঝতে পারেন না। এ বিষয়ে প্রশাসনেও খবর দেন না জিম্মিদের স্বজনেরা। জীবনের ভয়ে মামলার চিন্তাও করেন না তারা।
তবে যারা মুক্তিপণ দিতে না পারলে, তাদের বছরের পর বছর বন্দি থাকতে হয়। এভাবে এক সময় জিম্মিরাও হয়ে যান ডাকাত দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবার কাউকে ভারতে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে দস্যুরা বা ধরিয়ে দেওয়া হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
খুলনার দাকোপ উপজেলার ডাংমারি গ্রামের পরিমল বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মওলা মহাজনের হয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন বনের চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাপসি নদীতে। এখান থেকে তাকে জিম্মি করে নিয়ে যায় মোসারফ বাহিনী (মসা বাহিনী)। ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মারধোর শুরু করেন মসা। পরে মোসারফের দেওয়া ৫টি নম্বরে মোট ৭০ হাজার টাকা বিকাশ করার পর মুক্তি মেলে পরিমলের।
পরিমল জিম্মি থাকা অবস্থায় আমরা গিয়েছিলাম সুন্দরবনের পাড়ঘেঁষা ঢাংমারি গ্রামে। পরিমলদের বাড়ির সামনেই একটি খাল। এই খালটিই আলাদা করেছে বসতি আর বনকে। পাড়ে দাঁড়ালেই খালের ওপারের বনের মধ্যে বনজীবীদের বানানো বনবিবির মন্দির চোখে পড়ে।
এ গ্রামের জেলেরা বনে যাওয়ার সময় আপদ-বিপদ থেকে মুক্তির জন্য বনবিবির পূজা দিয়ে যান। মুসলমানরা গাজী-কালুর দোহাই দিয়ে নোয়াপাড়ার পীর সাহেবের পড়া লাল রুমাল নৌকায় গুঁজে বের হয়ে পড়েন। বনের বাঘ আর নৌকার কুমিরের হাত থেকে তারা রেহাই পেলেও রেহাই পান না দস্যুদের হাত থেকে।
তিন দিন আগে ছেলে অপহৃত হলেও কিছুই জানতেন না পরিমলের ৯০ বছর বয়সী বাবা সত্যরঞ্জন। ছেলেকে অপহরণের কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
জঙ্গলের ডাকাত বা দস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন না অপহৃতদের পরিবার ও মহাজন। অপহরণ ও মুক্তিপণের বিষয়টি কেউ জানুক- এটাও চান না তারা।
এসআই হক-নিউজ এডিটর/বিআই
রহমান মাসুদ
সুন্দরবন থেকে ফিরে: দুই সপ্তাহের সুন্দরবন ভ্রমন। পুরোটাই নৌকা জীবন। এতো ঘটনার মধ্য দিয়ে গেছি লিখতে কষ্ট হচ্ছিল। বুঝতে পারছিলাম কি লিখব! হয়ত অভিজ্ঞতার কিছুই উঠে আসেনি। তবু চেষ্টা করেছি।
এই অভিযানে দেখা পেয়েছি কিছু জীবন্ত ফসিলের। দেখেছি কুমির আর হরিণ শিকারের দৃশ্য। বনে সদ্যুদের কাছে জেলেদের জিম্মি জীবণ। বিক্যাশে টাকা পরিশোধ করে বনদস্যুদের কাছ থেকে জেলে মুক্তির দৃশ। সুন্দরবনের বনজীবিদের বন্দি জীবণ। তবে অনেকেই বলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জলদস্যুদের আতাতেঁই নাকি চলে সব কিছু…