দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মংলা বন্দরের ‘কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ’ প্রকল্প মঙ্গলবার অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মংলা বন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহের জন্য এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার সকালে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদেন দেওয়ার কথা রয়েছে। একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা যা সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন মেয়াদে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় একটি টায়ার মাউন্টেড ক্রেন (১০০ মেট্রিক টন) সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া একটি মোবাইল ক্রেন (৫০ মেট্রিক টন) সংগ্রহ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ১৩টি ফর্ক লিফট সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে একটি হেভি ডিউটি (৩৫ মেট্রিক টন), দুটি ৯ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন, চারটি ৫ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন ও ছয়টি লো মাস্ট ৩ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন লিফট সংগ্রহ করা হবে। দুটি রিচ স্ট্যাকার (৪৫ মেট্রিক টন) এবং ৩টি স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার সংগ্রহ করা হবে।
দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথ ও সমুদ্রপথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমুদ্র বন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মংলা এর মধ্যে অন্যতম। সাম্প্রতিক সময়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অদূর ভবিষ্যতে জেটি সংক্রান্ত কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু বিদ্যমান অপারেশনাল যন্ত্রপাতি যেমন কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং যন্ত্রপাতি যেগুলো রয়েছে সেগুলো ৩০ বছরের বেশি পুরনো ও জরাজীর্ণ। তাই এ প্রকল্পের মাধ্যমে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, দক্ষ এবং সুষ্ঠু বন্দর পরিচালনার জন্য আধুনিক কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিং যন্ত্রপাতি অত্যন্ত দরকার। ১৯৮০ সালের পূর্বে মংলা বন্দরে কার্গো কার্গো হ্যান্ডেলিংয়েরে জন্য ক্রেন ও ফর্ক লিফট ব্যবহার করা হতো।
১৯৮৩ সালে জেটি কমিশনিংয়ের সময়ে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। বর্তমানে কার্গো ও কন্টেইনার জাহাজ থেকে জেটিতে বহনের জন্য শোর ক্রেন ও ক্রেন অন বোর্ড ব্যবহৃত হয় এবং জেটি থেকে শেডে বহনের জন্য ট্রেইলার ফর্ক লিফট ও স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার ব্যবহার করা হয়।
হেভি লিফট কার্গো পরিচালনার জন্য ১০০ টন ক্ষমতার একটি ক্রেন থাকলেও তা দীর্ঘ ব্যবহারের ফলে ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে ২০ টনে নেমে এসেছে। এ বন্দরের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি পুরাতন হওয়ায় এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী ও ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে মংলা বন্দর। ২০০৭-০৮ সালে জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ের সংখ্যা ছিল ৯৫ যা ২০১২-১৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭৫-এ উন্নীত হয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের পরে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। খুলনা-মংলা রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্প সম্প্রতি সময়ে অনুমোদন হয়েছে। যা সম্পন্ন হলে মংলা বন্দরে কর্গো হ্যান্ডেলিংয়ে পরিমাণ প্রতি বছর ১৭ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় মংলা বন্দরেন জন্য কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ইকুইপম্যান্ট সংগ্রহ করা হবে। এতে করে পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে মংলা বন্দরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এজন্য প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।’
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
সুত্র- মফিজুল সাদিক, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম