অপরাধী চক্র দিন পালটাচ্ছে তাদের অপরাধের ধরণ ও কৌশল। অপরাধ করতে করতে ইদানিং অপরাধীদেরও হচ্ছে পদোন্নতি।
অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির এ বিষয়টি আবারও সামনে উঠে এলো বাগেরহাট পুলিশের অভিযানে গ্রেফতারকৃত দক্ষিণবঙ্গে ছিনতাই এবং ডাকিতির সাথে জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্যের ব্যাপারে সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে জানান হয় গ্রেফতারকৃতরা এর আগেও বিভিন্ন অপরাধের সাথে ছড়িত ছিল। এদের অনেকেউ ছিলেন মলম পার্টির সদস্য। কেই কেউ জেলও খেটেছেন দেশের বিভিন্ন জেলে। আর সাম্প্রতি সময়ে তারা বেছে নেয় পুলিশ পরিচয় দিয়ে ছিনতাই ও ডাকাতি।
রবিবার দিনভর অভিযানে পিরোজপুর এবং খুলনা থেকে স্থানীয় পুলিশের সহায়তার গ্রেফতারকৃত ৭ ডাকাত এবং উদ্ধার হওয়া লুট করা টাকাসহ বিভিন্ন মামলাল নিয়ে সোমবার দুপুরে বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নিজামুল হক মোল্যা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জান, চলতি মাসের ২ জুন দুপুরে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বাগেরহাট চেম্বার অব কর্মইন্ডাট্রিজের সাবেক সভাপতি এমদাদ হোসেন পাইকের বরকত অটোরাইস মিলের দুই কর্মচারীকে অস্ত্রেরমুখে অপহরনের পর মারপিট করে তাদের কাছ থেকে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এ চক্রটি।
এ ছিনতাই এর ঘটনার পর থেকে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে চক্রটিকে সনাক্ত করণ এবং গ্রেফতারে।
চক্রটি পিরোজপুরের বেকুটিয়া ফেরিঘাট এলাকায় বসে ডাকাতি প্রস্তুতি নিচ্ছে গোপণ সংবাদের ভিত্তিতে এমন খবর পেয়ে রোববার বিকালে বাগেরহাট পুলিশের একটি দল সেখানে পৌছে প্রথমে মিজান, আলম ও শাহজাহানকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুয়ায়ী রাতে অভিযান চালিয় খুলনা মহানগর থেকে আরো ৪ জনকে গ্রেফতার করে।
এসময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ৫ লাখ ৫ হাজার ৩২৫ টাকা, দুটি মোবাইলফোনসেট, একটি ওয়াকিটকি, ৩ জোড়া হ্যান্ডকাপ, ১টি খেলনা পিস্তল ও একটি খেলনা সর্টগান উদ্ধার করা হয়।
এসপি আরও বলেন, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এই সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পদ্মার এই পারে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছে। তাদের অপরাধের ধরণ ছিলো বেশ কৌশলি।
তারা পদ্মার এই পারের বিভিন্ন জেলায় ঘুরতে আসত। এক্ষেত্রে তারা এক বা একধিক মটর সাইকের এবং মাইক্রবাস নিয়ে আসত ওই শহরে। বেশির ভাগ ক্ষেতে তরা ঢাক থেকে ভাড় করে আনত মাইক্রবাস। আর কোন শহরে এসে প্রথমে তারা ব্যবসায়ীদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিত। কোন ব্যবসায়ী কখন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে তা জেনে তারপর তারা সংগঠিত হয়ে ছিনতাই করে থাকে বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
এসপি জানান পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, তারা একটি ছিনতাই এর জন্য দু থেকে তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করত। একটি দল ব্যাংকের নিচে অবস্থান করত। আর একটি দল ব্যাংকের ভেতরে কে কতো টাকা তুলছে এগুলো খেয়াল রাখত।
টাকার পরিমান বেশি হলে ব্যাংকের ভিতর অবস্থান করা সদস্য নিচে মটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষায় থাকা সদস্যদের টাকা বাহক ব্যাক্তিকে অনুসরনের নির্দেশ দিতেন। এর পর অর্থ বহণ করারিকে অনুসরণ করে এই দলটি সুযোগ বুঝে মাইক্রবাসে থাকা তাদের অন্য সদস্যদের খবার দিতেন। তারা এসে মাইক্রবাস থামিয়ে পুলিশ বা গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে আটকের নামে ধরে নিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিত। পরে মহাসড়কে সুবিধা মতন কোন স্থানে হাত ও চোখ বেধে চলন্ত গাড়ি দিয়ে ফেলে দিত চক্রটি।
এর আগে একই ভাবে বাগেরহাট ছাড়াও ফরিদপুরের ভাঙা এলাকায় একটি ছিন্তাই এর কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে বলে এসপি জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের ইউনুছ মৃধার ছেলে মিজানুর রহমান (৩২) একই গ্রামের আশরাফ আলী মৃধার ছেলে আলম মৃধা (৪৮), একই উপজেলার শুকতাঘর গ্রামের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মো. শাহজাহান হাওলাদার (৩০), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্ব আলীপুর গ্রামের ইসমাঈল সরদারের ছেলে মো. আরিফ হোসেন (২৫), একই উপজেলার এনায়েতনগর গ্রামের সেলিম সরদারের ছেলে মো. মিলন (২১), নড়াইল জেলার সদর উপজেলার চরবিলা গ্রামের আব্দুস সালাম মোল্লার ছেলে মো. আসারোল মোল্লা (২৩) ও পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আরাহবেগী গ্রামের আলম হোসেন (৪৫)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চক্রটির এই ৭ সদস্য ছাড়াও এদের সাথে জড়িত আরো একজনকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। চক্রের কাছ থেকে বাকি টাকাও খুব শিগগির উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে আশাবাদ জানান পুলিশ কর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বাগেরহাটের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহিদুর রহমান, বাগেরহাট মডেল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদক, বাগেরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলী আজম খানসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।