বাগেরহাট পুলিশের অভিযানে দক্ষিণবঙ্গে ভূয়া পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই এবং ডাকিতির সাথে জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রবিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে পিরোজপুর এবং খুলনা থেকে স্থানীয় পুলিশের সহায়তার তাদেরকে গ্রেফতার করে বাগেরহাট পুলিশের একটি দল।
এসময় তাদের কাছ থেকে ছিন্তাইয়ে ব্যবহৃত দুটি খেলনা আগ্নেঅস্ত্র, হ্যান্ডকাপ, ওয়াকিটকি, ডিবির জ্যাকেট, ছিনতাইকৃত নগদ টাকাসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি জাননো হয়েছে।
পুলিশ জানানায়, গত ২ জুন বাগেরহাটে বিসিক শিল্প নগরীর বরকত রাইসমিলের সত্ত্বাধীকারী এমদাদ আলী পাইকের দুই ম্যানেজার প্রভাত সাহা ও রুহুল আমিনকে ভূয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাগেরহাট পৌরসভাধীন কেবি মাছ বাজার এলকা থেকে একটি মাইক্রবাসে তুলে অপহরণ করে এই চক্রটি। পরে তাদের হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে চোখ বেধে কাছে থাকা ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় তারা।
মাইক্রোবাসটি খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা এলাকায় পৌঁছে হাত ও চোখ বেধে ফেলে চলন্ত গাড়ি দিয়ে তাদের ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির অংশিদার শুধুসুদন দাম বাগেরহাট মড়েল থানায় ওই দিন একটি মামলা করেন।
এর পর থেকে চক্রটিকে সনাক্ত করণ এবং গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে রোববার (২২ জুন) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পিরোজপুর জেলা ভেকুটিয়া ফেরিঘাট থেকে এই চক্রের তিন জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক চক্রটির আরো ৪ সদস্যকে খুলনা থেকে আটক করে পুলিশ।
এসময় তাদের কাছ থেকে গত ২ জুন পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকৃত সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকার ৫ লক্ষ ৫ হাজার ৩২৫ টাকা, ছিন্তাই কাজে ব্যবহৃত তিন জোড়া হ্যান্ডকাপ, ১টি ওয়াকিটকি, একটি মটরসাইকেল, খেলনা পিস্তল, শটগান ও একটি ডিবির জ্যাকেট উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের ইউনুছ মৃধার ছেলে মিজানুর রহমান (৩২) একই গ্রামের আশরাফ আলী মৃধার ছেলে আলম মৃধা (৪৮), একই উপজেলার শুকতাঘর গ্রামের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মো. শাহজাহান হাওলাদার (৩০), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্ব আলীপুর গ্রামের ইসমাঈল সরদারের ছেলে মো. আরিফ হোসেন (২৫), একই উপজেলার এনায়েতনগর গ্রামের সেলিম সরদারের ছেলে মো. মিলন (২১), নড়াইল জেলার সদর উপজেলার চরবিলা গ্রামের আব্দুস সালাম মোল্লার ছেলে মো. আসারোল মোল্লা (২৩) ও পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আরাহবেগী গ্রামের আলম হোসেন (৪৫)।
সংবাদ সম্মেলনে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নিজামুল হক মোল্যা জানান, প্রথমে পিরোজপুর থেকে এই চক্রের তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক রাতে অভিযান চালিয়ে বাকিদের খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রের সদস্যরা দির্ঘ্য দিন ধরে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দক্ষিন বঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে (পদ্মার এপারে) ছিনতাই এবং ডাকাটি করে আসাছিল।
তিনি আরো জানান, চক্রটি যশোর রুটে ডাকাতি প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। এর আগে বাগেরহাট ছাড়াও ফরিদপুরের ভাঙা এলাকায় একটি ছিনতাই এর কথা চক্রটি পুলিশের কাছে তারা স্বীকার করেছে বলে জানান এসপি।
চক্রটির কয়েক জন সদস্য এর আগে বিভিন্ন এলাকায় মলোম পার্টির সদস্য হিসাবে কাজ করে আসছিল। এই চক্রের কাছ থেকে বাকি টাকাও খুব শিগগির উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলেও তিনি দাবী করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. জাহিদুর রহমান, বাগেরহাট মডেল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রিপন কুমার মোদক, বাগেরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলী আজম খানসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।