তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বাগেরহাটে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালিত হয়েছে।
সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল ও মংলায় কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাতিলের দাবিতে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ওই কর্মসূচি পালিত হয়।
সংগঠনের জেলা শাখার আহ্বায়ক রনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. শহীদুল্লাহ।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিক্ষভ সমাবেশে অনান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, কেন্দ্রীয় নেতা সরদার রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
সমাবেশে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা তোয়াক্কা না করে সরকার শুধু মাত্র গায়ের জোরে সুন্দরবনে জন্য ক্ষতিকর কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মন করছে। দেশে ও জাতীয় স্বার্থের কোন রকম তোয়াক্কা না করে কমিশন লোভি এ সরকার শুধু মাত্র নিজেদের পকেট ভারি করতে সুন্দরবন বিধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নামে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করছে।
সেই সাথে সাম্প্রতি মংলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান করছে। এসময় বক্তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ওরিয়নের নানা প্রকল্পে অনিয়ম ও দূর্নিতির কথা তুলে ধরে রামপাল থেকে সুন্দরবনের আরো কাছে ক্ষতিকর এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান প্রতিহতের ডাক দেন।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এদেশের ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা লোভীরা ভারতের আজ্ঞাবহ হয়ে টিকে থাকতে চায়। তাই যে কোন ভাবেই তারা ভারতের স্বার্থ রক্ষা করছে।
এসময় তারা সুন্দরবন ধ্বংসের এসব আয়োজন অবিলম্বে বন্ধ করা না হলে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামীতে আবারো লংমার্চসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয় হবে জলে ঘোষনা করা হয়ে।
সুন্দরবনের ক্ষতি করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান বন্ধের দাবিতে বাগেরহাটের এ অবস্থান কর্মসূচি থেকে চলতি মাসের মধ্যে সাতক্ষীরা, পিরোজপুর ও যশোর জেলা শহরে একই ভাবে অবস্থান কর্মসুচির পালন করা হবে বলে জানন হয়।
সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সুন্দরবন রক্ষায় জুন-জুলাই মাসে খুলনায় বিভাগী কনভেনশনের আয়োজন করা হবে। আগামী ১৮ থেকে ২০ আগস্ট সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার ঘোষান করা হয়।
কোনো অবস্থাতেই সুন্দরবনের পাশে রামপালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ভাবে এবং মংলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ওরিয়ন গ্রুপ’কে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না বলে জাতীয় কমিটির নেতারা সমাবেশে হুশিয়ারি দেন।
গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি তার বক্তব্যে, রামপাল প্রকল্প কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থেকে সুইচ টিপে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভোধন প্রক্রিয়াকে চোরাচালানের সাথে তুলনা করে।
প্রসঙ্গত, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে “মৈত্রি সুপার থারমাল পাওয়ার” প্রকল্প নামে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতমধ্যে এ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত ১হাজার ৮৩৪ একর জমির মধ্যে ৪২০ একর বালুভরাট করা হয়েছে। বর্তমানে এখন সেখানে অবকঠামো নির্মাণের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলছে। গত বছর ৫ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহ ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এছাড়া জেলার মংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে সুন্দরবনের আরও কাছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপ ৬৩০ মেগাওয়াটের আরো একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করতে জমিতে বালু ভরাটসহ কাজ শুরু করেছে।