বাগেরহাটের বরণ্যে রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল আলম তালুকদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না—রাজেউন)।
শনিবার ভোর রাতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল আলম তালুকদার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সুন্দরবন অঞ্চলের সাব-সেক্টরের কমান্ডার দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থান ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন।
তিনি বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের জিএস, মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর স্নেহধন্য এই নেতা ভাষানী ন্যাপের বৃহত্তর খুলনা জেলার সাধারন সম্পাদক, বাগেরহাট বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়ামের সদস্য ছিলেন।
বাগেরহাটের বিভিন্ন গনতান্ত্রিক ও সামাজিক আন্দোলনে অসাম্প্রদায়িক এ নেতা জেলার মোড়েলগঞ্জ ও শরনখোলায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এই নেতা।
মরহুমের পারিপারিক সূত্রে জানা গেছে, ৩ দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে শামসুলকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া করা হয়। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সকালে স্বজনরা ঢাকা থেকে তার মরদেহ নিয়ে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।
শনিবার দুপুরে মরহুম এই নেতার প্রথম নামাজে জানাযা বাগেরহাট শহরের মুনগঞ্জ বটতলা মাঠে, দ্বিতীয় নামাজে জানাযা বাগেরহাট কলেজিয়েট স্কুল মাঠে, বিকেলে মোড়েলগঞ্জে উপজেলার সন্নাসী বাজারে ও সন্ধ্যায় শরনখোলা সদরের রায়েন্দায় নামাজের জানাযা শেষে তার প্রতিষ্ঠিত শরনখোলা ডিগ্রী কলেজের মসজিদ প্রাঙ্গনে দাফন করা হবে।
শামসুল আলম পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকরি গ্রামের প্রয়াত মনুচেহের তালুকদারের ছেলে। ষাটের দশকে তিনি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম খোন্তাকাটা গ্রামে জমি কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এই মুক্তিযোদ্ধা বাগেরহাট পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৬৪ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন খুলনা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হন এবং পরের বছর সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৭ সালে এই সাক্ষী ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন ও এক বছর পরে সহসভাপতি হন।
১৯৬৯ সালে তালুকদার মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন এবং ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশ নেন।
১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৮ সালে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। সম্প্রতি তিনি কাজী জাফরের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
তার মৃত্যুতে জাতীয় পাটি (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা: টিআই ফজলে রাব্বি, মহাসচিব মোস্তাফা জামাল হায়দার, মুক্তিযুদ্ধকালীন সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজার (অব:) জিয়াউদ্দিন ,বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা, জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ সালাম, সাধারন সম্পাদক আলী রেজা বাবু প্রমখ নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।