রামপালের পর এবার সুন্দরবনের আরো কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে ‘ওরিয়ন গ্রুপ’। আর এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন প্রকার ছাড়পত্র ছাড়াই তারা বাগেরহাটের মংলায় প্রকল্প এলাকায় জমি কিনে মাটি ভরাট শুরু করেছে।
সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটের রামপালে ‘বাংলাদেশ-ভারত’ যৌথ মালিকানায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্কের মাঝেই চলছে ওরিয়নের এই প্রকল্পের কাছ।
সুন্দরবনের সংরক্ষিত অঞ্চল থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দূরত্ব ১০ দশমিক ৯২ কিলোমিটার।
সমালোচকদের দাবি, সুন্দরবনের এত কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে হুমকিতে পড়বে বন। আর সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিবেশের ওপর তার প্রভাব হবে মারাত্মক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে বুকে আগলে রক্ষা করে এই বন।
বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে উপকূলীয় লোকজন অরক্ষিত হয়ে পড়বে, বিপর্যয়ে পড়বে বনের জীববৈচিত্র্য। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা বিতর্ক। সব মিলিয়ে সুন্দরবন নিয়ে শঙ্কিত দেশের মানুষ। সেই শঙ্কার পারদ আরো খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী করে সুন্দরবনের আরো কাছে এবার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে ওরিয়ন গ্রুপ। ইতিমধ্যে বাগেরহাটের মংলায় প্রকল্প এলাকায় জমি কিনে মাটি ভরাটের কাজও শুরু করেছে তারা।
অভিযোগ উঠেছে, মাটি ভরাট শুরু করলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশের কোনো ছাড়পত্রই নেয়নি ওরিয়ন গ্রুপ। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, পরিবেশের অবস্থানগত ছাড়পত্র না নিয়ে প্রকল্পের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে না।
নিয়ম না মানায় পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও তা মানছে না ওরিয়ন। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, প্রলোভন দেখিয়ে ও জোর করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে প্রকল্প এলাকায় জমি কিনেছে তারা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২৭ জুন পিডিবির সঙ্গে ওরিয়ন গ্রুপের ওরিয়ন খুলনা পাওয়ার লিমিটেডের ৫৬৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি সই হয়। কাগজে-কলমে দেখানো হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে খুলনায়। অথচ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে মংলার বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্যাওলাবুনিয়া গ্রামে। এ কেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের সংরক্ষিত অঞ্চলের দূরত্ব মাত্র ১০ দশমিক ২২ কিলোমিটার। কেন্দ্রের জন্য ইতিমধ্যে ওরিয়ন গ্রুপ সেখানে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে ২০০ একর জমি কিনেছে। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ জায়গা মাটি ফেলে ভরাটও করেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর একাধিকবার জানিয়েছে, পরিবেশের অবস্থানগত ছাড়পত্র না নিয়ে প্রকল্পের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে না। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ও গত এপ্রিলের মধ্যে পরিবেশের চূড়ান্ত ছাড়পত্র (ইআইএ) নেওয়ার সময়সূচি বেঁধে দিয়েছিল। তবে বেঁধে দেওয়া সময়েও ইআইএ প্রতিবেদন জমা দেয়নি ওরিয়ন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিচালক (এনভায়রনমেন্ট ক্লিয়ারেন্স) মো. শাহজান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছ থেকে অবস্থানগত ছাড়পত্র ও ইআইএ-এর কোনোটিই তারা (ওরিয়ন গ্রুপ) নেয়নি। প্রকল্পের অবস্থানগত ছাড়পত্র ও ইআইএ পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে জমা দেয়নি ওরিয়ন। অবস্থানগত ছাড়পত্র না নেওয়ায় প্রকল্পের সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।’
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রামপালের এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এখন ওরিয়নের ৫৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র যখন একসঙ্গে চলবে, তখন ওই বিদ্যুকেন্দ্রগুলো থেকে আলাদাভাবে যে ক্ষতি হবে তা একত্র করে (Cumulative impact study) চিহ্নিত করতে হবে। তা না করে পরিবেশের ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ নেই।
ওরিয়ন পাওয়ার খুলনা লিমিটেডও বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে পরিবেশের ছাড়পত্র না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
ওরিয়ন পাওয়ার খুলনা লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘এ কেন্দ্রের নাম খুলনা হলেও মূলত এটি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় কাছাকাছি।’ প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য পরিবেশের কোনো ছাড়পত্র নিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরে পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য কোনো কিছু জমা দেইনি।’ পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া প্রকল্প এলাকায় কোনো উন্নয়নকাজ করা হলো পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন- আইনের এ দিকটির কথা জানালে মো. রেজাউল করিম তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন।
সাম্প্রতি ওরিয়নের প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে এসেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা। তিনি বলেন, বর্তমানে সেখানে ড্রেজার দিয়ে বালি ভরাট করা হচ্ছে। এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় মাটি/বালি ভরাট হয়ে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে লাল ধরনের বা রেড ক্যাটাগরির ভয়ংকর পরিবেশদূষণ শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কারণে এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার আগেই অবস্থানগত সম্মতি নিতে হবে। তবে এ সময় প্রকল্প এলাকায় কোনো ধরনের নির্মাণকাজ বা ভূমি উন্নয়নকাজ করা যাবে না। এরপর ইআইএ নেওয়ার জন্য ইআইএ পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দিতে হবে। এ নিয়ে উন্মুক্ত গণশুনানিও করতে হবে। সবার যৌক্তিক মতামত নেওয়ার পর যদি পরিবেশ অধিদপ্তর মনে করে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না তবেই মিলবে ইআইএ। আর সেটি পেলেই কেবল প্রকল্পের উন্নয়নকাজ শুরু করা যাবে।
ওরিয়ন এর কোনোটিই এখন পর্যন্ত শুরু করেনি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো সম্মতি না মিললেও ২০০ একর জায়গা কিনে তার ৩৫ শতাংশ ভরাটও করে ফেলেছে তারা। প্রতিদিনই চলছে ভরাটের কাজ।
স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে জোর করে ও প্রলোভন দেখিয়ে কিনেছে ওরিয়ন। এ প্রসঙ্গে এলাকার দিগরাজ ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক অসিত সরকার মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, এ অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ মানুষ সনাতন ধর্মাবলম্বী। স্থানীয় প্রভাবশালীরা জোর করে ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের জমি কিনেছে।
হুমকিতে পড়বে সুন্দরবন : সুন্দরবনের সংরক্ষিত অঞ্চল থেকে প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দূরত্ব ১০ দশমিক ৯২ কিলোমিটার। এ কেন্দ্রের কী পরিমাণ প্রভাব সুন্দরবনে পড়বে- তা নিয়ে গত কয়েক বছরে বিস্তর লেখালেখি ও গবেষণা হয়েছে। বনের এত কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে তীব্র বিরোধিতা এসেছে দেশজুড়ে। কেন্দ্রটির নির্মাণ বন্ধের দাবিতে বাম সংগঠন, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং পরিবেশবাদীরা ঢাকা থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত লংমার্চও করেছেন। এখন রামপাল কেন্দ্রের তুলনায় সুন্দরবনের আরো কাছে ওরিয়ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় সুন্দরবনের ওপর আরো বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও আন্দোলনকারীরা। সুন্দরবন থেকে ওরিয়নের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দূরত্ব মাত্র ১০ দশমিক ২২ কিলোমিটার।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রামপালে যে কেন্দ্র স্থাপন হচ্ছে তার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে রয়েছে। যদি এখন সেখানে আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়, তাহলে দুটি কেন্দ্র একত্রে কী ধরনের ক্ষতি করবে তার একটি যৌথ গবেষণা করতে হবে। এ ধরনের গবেষণা না করে কোনোভাবেই পরিবেশ অধিদপ্তরের চূড়ান্ত অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। ওরিয়ন কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাট করছে, যা পরিবেশ আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দিনের পর দিন ওরিয়ন সেখানে জমি কিনেছে, মাটি ভরাট করেছে কিন্তু সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বলছে এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। তিনি আরো বলেন, সুন্দরবন ধ্বংসের জন্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিই যথেষ্ট। যদি এর সঙ্গে ওরিয়নের কেন্দ্রটি যুক্ত হয়, তাহলে এই বনের কোনো নাম-নিশানা থাকবে না। আর ওরিয়নের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ থাকার পরও তারা কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সেখানে কেন্দ্র স্থাপন করছে- তাতে বোঝা যাচ্ছে, সরকার সুন্দরবন নামের কোনো বনের অস্তিত্ব থাকুক এটা চায় না।
সরকারকে শিগগির ওরিয়নের বেআইনি এ কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের খান। তিনি বলেন, ‘সরকারের যেসব নীতিমালা রয়েছে তার কোনোটিই ওরিয়ন মানছে না। তাদের কার্যক্রম বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ সুন্দরবনের অস্তিত্ব যেভাবে সংকটের মধ্যে পড়ছে তাতে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকবে না।’
নিয়ম মানে না ওরিয়ন : এর আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুরে বুড়িগঙ্গা নদী দখল করে ওরিয়ন গ্রুপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। বুড়িগঙ্গার এ অংশে নদীর সীমানা থেকে অন্তত ৬০ ফুট ভেতরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ করে ওরিয়ন গ্রুপ। কাশিপুরে নির্মাণাধীন ১০২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তেলভিত্তিক এ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ইআইএ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি ওরিয়ন।
সাম্প্রতি হাইকোর্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবৈধ স্থাপনা ভাঙার নির্দেশসহ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ বন্ধের আদেশ দেন। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার চরবলাকিয়ায় নদী দখল করে ওরিয়ন ৫৫২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে। সেখানেও নদী দখলের অভিযোগ রয়েছে ওরিয়নের বিরুদ্ধে। তবে বরাবরের মতো এ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রেও ওরিয়ন পরিবেশের ছাড়পত্র নেয়নি।
রামপাল ও ওরিয়নের বিদ্যুকেন্দ্র বন্ধের দাবি : রামপালের পাশাপাশি অবিলম্বে ওরিয়নের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
শনিবার রাজধানীতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ফিল্ম অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ দাবি জানান। ‘সুুন্দরবন, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ খাত : সরকারের তৎপরতা ও বাজেট ২০১৪’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সুন্দরবন ধ্বংসের সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ভারতীয় কম্পানির কর্তৃত্বাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। যাবতীয় নিয়মনীতি ও পরিবেশ আইন অগ্রাহ্য করে সুন্দরবনের আরো কাছে কয়লাভিত্তিক আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার ওরিয়ন গ্রুপকে অনুমতি দিয়েছে। তিনি রামপাল ও ওরিয়নের প্রকল্প বাতিল এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যা সমাধানে জাতীয় কমিটির সাত দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
আনু মুহাম্মদ বলেন, গ্যাস ও কয়লাসম্পদে জাতীয় মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। শতকরা ১০০ ভাগ গ্যাস ও কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করতে হবে। এই কয়লা-গ্যাস বিদেশি মালিকানায় দেওয়া যাবে না, বিদেশে পাচার করার লক্ষ্যে রপ্তানিমুখী কোনো চুক্তিও থাকা চলবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, পিএসসি ২০১২ সংশোধন করে চাহিদামতো আরো সুবিধা বাড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ বিদেশি কম্পানির হাতে তুলে দিতে চুক্তি করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার সত্ত্বেও এখনো ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবেশ সমীক্ষা না করে, অন্য দেশের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা না করে রাশিয়ার কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তাদের পূর্ণ কর্তৃত্বে রূপপুর পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজে কয়েক দফা চুক্তি করেছে সরকার। এগুলো অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রেন্টাল পাওয়ারের চুক্তি বাতিল করে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট চালু, মেরামত ও নবায়নের আহ্বান জানানো হয়। জাতীয় স্বার্থ এবং পরিবেশ ও জনস্বার্থ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদের মিশ্রণ ঘটিয়ে জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করে তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ শুরুরও দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন খান, প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, রুহিন হোসেন প্রিন্স, রাজেকুজ্জামান রতন, রাগিব আহসান মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।