টানা তিন দিন চেষ্টার পর সুন্দরবনের আগুন নিভাতে সক্ষম হয়েছে দমকল বাহিনী, স্থানীয় লোকজন ও বন বিভাগের সদস্যরা।
ঘটনাস্থল থেকে শুক্রবার সন্ধায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসাইন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।
তিনি জানান, আগুন বর্তমানে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এবং নিভে গেলেও শনিবারও ওই এলাকায় বিশেষ নজর রাখবে দমকল বাহিনী ও বনবিভাগ।
ডিএফও বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, আজ (শুক্রবার) দুপুর পর্যন্ত কিছু কিছু জায়গায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা দেলেও পানি ছিটিয়ে সেগুলো পুরো পুরি নিয়ন্ত্রণ করছেন ফায়ার সার্ভিস ও বনবিভাগের কর্মীরা। আগুনে সুন্দরবনের ওই এলাকায় অন্তত ৩ একর পুড়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, পুড়ে যাওয়া এলাকায় বড় কোন গাছ ছিল না। শুধু ‘বলা’ গাছ পুড়েছে। কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত করে বলা যাবে।
ফায়ার সার্ভিস মোড়েলগঞ্জ ষ্টেশনের ষ্টেশন অফিসার আরিফুল হক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে সন্ধা ৬টা ৪০ মিনিটে বলেন, সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আগুন পুরোপুরি নিভান সম্ভব হয়েছে।
বুধবার দুপুরের পর পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালী ও আমুরবুনিয়া ফরেষ্ট ক্যাম্পের মাঝামাঝি বাইশেরছিলা এলাকার গাছ-পালায় আগুন জ্বলতে দেখে বন বিভাগকে খবর দেয় বনজীবীরা। তাৎক্ষণিকভাবে বনবিভাগের কর্মীরা আশপাশের খাল থেকে পানি এনে তা দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে ফায়ার ব্রিগেডের একটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। মাটিতে লাইন অব ফায়ার তৈরি করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলে।
রাতে বিরতির পর শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে তারা আবারো আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা।
আগুন নিভে গেলেও এখন আগুন লাগার কারণ সম্পার্কে নিশ্চিত কোন তথ্য জানাতে পারেনি বন বিভাগ বা ফায়ার সার্ভিস।
অবশ্য স্থানীয় অধিবাসীরা প্রাথমিকভাবে বন বিভাগের কাছে আগুন লাগার তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন৷
প্রথমত, মৎস্যজীবীদের রান্নার চুলা থেকে আগুন লাগতে পারে।
দ্বিতীয়ত, মধু আহরণের জন্য মৌচাকে মৌয়ালদের দেওয়া ধোঁয়ার জন্য তৈরি আগুন সঠিকভাবে না নেভানোর ফলে তা ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে এবং তৃতীয়ত, বন্য প্রাণী শিকার বা অন্য কোনো কারণে বনদস্যুদের জ্বালানো আগুন ছড়িয়ে এ অবস্থা হয়ে থাকতে পারে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের সংরক্ষিত নথি ও বিভিন্ন সময়ে বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের বনভূমির উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে কিছু নিচু এলাকায় প্রায় প্রতিবছর বসন্তের শেষে এবং গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতে প্রবল বাতাস ও দাবদাহের সময় আগুন লাগে৷ এসব এলাকায় বর্ষায় পানি জমে, শীতকালে শুকিয়ে যায়। এসব এলাকায় সাধারণত গুল্ম, ঘাস, লতাপাতা ও ঝোপজাতীয় গাছ দেখা যায়৷ বড় গাছ জন্মে না।
সারা বছর গাছের পাতা ঝরে পানিতে পড়ে আধা পচা পাতার স্তর তৈরি হয়। শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে ঝরা পাতার এই স্তরের ভাঁজে মিথেন গ্যাস জমে। এ অবস্থায় প্রখর সূর্যতাপ বা বনজীবীদের ব্যবহৃত আগুন থেকে এসব এলাকায় আগুন লাগে। মিথেন গ্যাসের প্রভাবে আগুনের তীব্রতা ও ব্যাপ্তি বাড়ে।
বন বিভাগ বলছে, বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এ ধরনের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে না, পাতার নিচে মাটি ও শেকড়ের ভেতর দিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ধিকিধিকি জ্বলে উত্তাপ ও ধোঁয়া সৃষ্টি করে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলের আশপাশে নদী-খাল অর্থাৎ পানির উৎস না থাকলে আগুন নেভানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হয়।