১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গোঠিত দেশের অন্যতম বৃহৎ উপজেলা মোরেলগঞ্জ এর স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন ডাক্তার শূন্য! রোববার পর্যন্ত একজন মেডিকেল অফিসার থাকলেও, এখন তাও নেই।
উপজেলার এক মাত্র এ সরকারি হাসপাতালটিতে মোট ২৪টি মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে বর্তমানে দায়িত্বরত আছেন মাত্র ১ জন। এছাড়া ৫০শয্যার হাসপাতালটিতে গুরুত্বপূর্ণ আরো ৩৩টি পদ শূন্য রয়েছে বহুদিন ধরে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন করনে এক এক করে জেলার এই স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সটি থেকে ডাক্তার বদলী হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে এ শূন্যতার। ফলে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের এই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে সল্প খরচে সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডাক্তার শূন্য মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবার বাস্তব দৃশ্য। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে মোট ৩১ সয্যার মধ্যে ৪১জন রোগী ভর্তি আছে। যাদের মধ্যে ১৫জন রয়েছে বিভিন্ন অপারেশনের রোগী। পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার অনেক রোগীও চিকিৎসা নিচ্ছেন এ হাসপাতালে।
ভর্তি থাকা এসব রোগীদের জরুরী প্রয়োজনেও মিলছে না কোন ডাকারের সেবা। জরুরী বিভাগে সাধারণ ছেড়া কাটা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন হারুণ শেখ নামে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। আর আপাতত জরুরী বিভাগের তিনিই সার্বক্ষণিক ভরসা।
প্রায় ৪ লক্ষ জনবসতির এ উপজেলা হাসপাতালটির জনবল সংকট এবং রোগীদের ভোগান্তি বিগত দিনের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ এখানে মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট, ডেন্টাল সার্জন ও সহকারী সার্জনের ২৪টি মঞ্জুরীকৃত পদ থাকলেও এখন আছেন মাত্র ১জন। তিনিও আবার প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এ ছাড়া আরো ৩৩টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে বহুদিন ধরে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন মোহাম্মদ ইউসুফ বাগেরহাট জেলা সদরে মিটিংয়ে অংশ গ্রহনের জন্য মোরেলগঞ্জ হাসপাতাল ত্যাগ করলেও গতকাল পর্যন্ত কর্মস্থলে যাননি। সে কারনে সারাদিনে কোন ডাক্তারই ছিল না হাসপাতালটিতে । এর আগে ৩ দিনের প্রশিক্ষণে চলে গেছেন এ হাসপাতালের একমাত্র মেডিকেল অফিসার ডা. কামাল হোসেন মুফতি। তিনি একাই দীর্ঘ এক মাসের অধীক সময় ধরে দিয়ে যাচ্ছিলেন চিকিৎসা সেবা।
জরুরী বিভাগ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, আউটডোর, ইনডোর সবই তিনি একা সামলাবেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তার দায়িত্ব ও অধীকাংশ সময় ডা. কামাল হোসেন মুফতিকে পালন করতে হয়।
৩১ শয্যার মোরেলগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সটিকে ২০১২ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও তা সীমাবদ্ধ রয়েছে ভবন নির্মান ও কাগজপত্রের মধ্যেই। বাস্তবে ৫০ শয্যা তো দুরের কথা ৩১ শয্যার সেকেলে সেই সেবাটুকুও পাচ্ছেনা এ এলাকার দরিদ্র, মধ্যবিত্ত্ব ও দায়গ্রস্থ মানুষেরা।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. নুর উদ্দিন মোহাম্মদ ইউসুফ এবং বাগেরহাটের সিভিল সার্জন মোঃ বাকির হোসেন জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল সংকটের কথা জানানো হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হতে পারে বলেও আশ্বাস দেন তারা।