প্রচ্ছদ / খবর / বাগেরহাটে পরিবহন ধর্মঘট; দুর্ভোগ চরমে

বাগেরহাটে পরিবহন ধর্মঘট; দুর্ভোগ চরমে

Bagerhat-pic-02(13-05-2014)যুবলীগ নেতা বাগেরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীনা হাসিবুল হাসান শিপনসহ দু’জন গ্রেফতারের প্রতিবাদে বাগেরহাট থেকে ১৬ রুটে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল।

চাঁদাবাজি ও হামলার মামলায় শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের এ কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনটি।

এদিকে বাগেরহাটে চলা অঘোষিত এ হরতাল অবরোধে সকল প্রকার যানবান চলাচলের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে দোকান পাটও। মঙ্গলবার দুপুর আড়ইটা পর্যন্ত বাগেরহাট শহর ঘুরে কোথাও একটি চায়ের দোকানও খোলা দেখা যায়নি।

অপরদিকে মটর শ্রমিকদের আকস্মিক ভাবে দেওয় এই অবরোধ চরম দূর্ভোগে পড়েছে দুর দুরান্ত থেকে আসা সাধারন যাত্রীরা। সেই সাথে বাগেরহাট থেকে কোন যান বাহন ছেড়ে না যাওয়ায় প্রয়জনেও শহরের বাইরে যেতে পারছেন না কেউ।

বাগেরহাটের শরণখোলার উদ্দেশে যাত্রা করা মালা বেগম নামের এক নারী যাত্রী বেলা একটার দিকে বাগেরহাট ইনফোকে জানান, দুই মাসের শিশুকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে করিম পরিবহনে করে শরণখোলায় যাচ্ছিন। সকালে বাগেরহাটে বাস পৌছালে বাস আটকিয়ে রাখা হয়। সকাল থেকে রাস্থায় বসে-দাড়িয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন। দেকানপাটও খোলা নেই যে, কিছু কিনে খাবো।

বাগেরহাট বাস স্টান্ডের সামনে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা শাখার সহকারী ব্যাবস্থাক ঋষি কেশ মন্ডল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘সকালে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে গ্রামে বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার উদ্দেশে যাবার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিআরটিসির খুলনা কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন বাগেরহাটে গোলমাল চলছে গাড়ি যাবে না। পরে রুপসা হয়ে টেম্পুতে বাগেরহাটের উদ্ধেশে রওনা দেন। টেম্পু, ভ্যান, অটোরিকসা, ইজিবাইকে করে বহু কষ্টে বাগেরহাট পর্যন্ত আসলেও এখন আর যেতে পাছেন না তারা।

প্রচন্ড রোদের মাঝে বাগেরহাট বাস স্টান্ডের সামনে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ঋষি কেশ মন্ডলের অপেক্ষা।
প্রচন্ড রোদের মাঝে বাগেরহাট বাস স্টান্ডের সামনে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ঋষি কেশ মন্ডলের অপেক্ষা!

তিনি জানান, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে, গাছ ফেলে এবং যাত্রীবাহী বাস আড়া আড়ি ভাবে রেখে রাস্থা অবরোধ করা হয়েছে। বেরিকেট দিয়ে পিকেটিং এবং চলাচল কারী ছোট ছোট যান বাহন থেকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখান বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কি ভাবে বাড়ি যাবেন তা নিয়ে নিজের সঙ্কার কথা বলেন তিনি।

শুধু মালা বেগম বা ঋষি কেশ মন্ডল নয়; এমন দুর্ভোগে পড়েছে পথে বের হওয়া হাজারো যাত্রী।

এব্যাপারে বাগেরহাট মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার আব্দুল বাকী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, প্রশাসনের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ভূমিদস্যুর করা  চাঁদাদাবির মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছে। নিউ বসুন্ধরার মালিক আব্দুল মান্নানের বিরদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, সে সন্ত্রাসীদের গড ফাদার। চিহ্নিত খুনিরা তার বেতনভুক্ত কর্মচারী।

তিনি আরো বলেন, এই শ্রমিক নেতাকে গুম করার উদ্দেশে পুলিশ বাসা থেকে ধরে আনে। তাকে ধরে আনার পর থেকেই জনসাধারন থানা ঘেরাও করে রাখে। থানা ঘেরাও করে না রাখলে পুলিশ তাকে গুম করে দিতো। এছাড়া রাতে থানায় রেখে শিপনকে ব্যাপক শারিরীক নির্যাতন করা হয়েছে বলেও এই নেতা অভিযোগ করেন।

এদিকে দুপুরে গ্রেফতার কৃত বাগেরহাট পৌরসভার পেনেল মেয়র কাউন্সিলন মিনা হাসিবুল হাসান শিপনকে বাগেরহাট মডেল থানা থেকে নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

বাগেরহাট মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো. আলী আজম খান বাগেরহাট ইনফোকে জানান, সোমবার রাতে নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচা ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মো. আবু জাফরের দায়ের করা ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি (চাঁদাবাজির) ও অফিস ভাংগুর মামলায় গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় শ্রমিক নেতা মিনা হাসিবুল হাসান শিপন (৪২) ও ছিদ্দিকুর রহমানকে (৩৬)।

এদের মধ্যে শিপন বাগেরহাট আন্তজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি বাগেরহাট পৌর যুবলীগের সভাপতি ও বাগেরহাট পৌর সভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র পদে রয়েছেন। আর ছিদ্দিকুর তাঁতীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক।

বাগেরহাট-খুলনা সড়কসহ অভ্যন্তরীণ ১৬টি রুটে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

Bagerhat-pic-04(13-05-2014)এসময় তারা নেতার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পরে তারা মিছিল নিয়ে বাগেরহাট মডেল থানার দিকে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের শহীদ মিনার এলাকায় আটকে দেয়। এই ঘটনার পর শহরের দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।

ওসি আলী আজম জানান, কাউন্সিলরের সমর্থকরা বাগেরহাট থেকে যান চলাচল বন্ধ করে রেখেছে। সকাল পৌনে ৯টার দিকে একদল উৎশৃঙ্খল সমর্থক মিছিলসহ জোর করে থানায় প্রবেশের চেষ্টা করে। তারা কর্তব্যরত পুলিশের উপর ইট ছুড়েছে। এক পর্যায়ে পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

‘নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান জানান, “রোববার সন্ধ্যার দিকে আমার ছেলে জাকারিয়া হাসানকে রাস্তায় তার গাড়ি থামাতে বলে ছিদ্দিকুর রহমান। কিন্তু গাড়ি না থামানোয় ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে নুর মসজিদ এলাকায় আমার ছেলের গাড়ি থামিয়ে তাকে মারধর করে চলে যায়। পরে ছিদ্দিক শ্রমিকনেতা শিপনসহ শতাধিক লোকজন নিয়ে শহরের মিঠাপুকুরপাড় এলাকায় আমার কার্যালয়ে এসে কুড়ি লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই চাঁদার টাকা না পেয়ে তারা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে চলে যায়। এই ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।”

মামলায় শ্রমিক নেতা শিপন ও ছিদ্দিকুরসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো এক দেড়শ লোককে আসামি করা হয়েছে বলে বাগেরহাট মডেল থানা সূত্রে জান গেছে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শ্রমিক নেতার বড় ভাই বাগেরহাট আন্তজেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাদল মিনা।

এব্যাপারে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা জানান, পৌর কাউন্সিলর শিপনসহ দুই জনকে সুনির্দিষ্ট একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামি। এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত কাউন্সিলরের কিছু উৎশৃঙ্খল সমর্থক যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তাদের প্রতিহত করতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তারের আগে শিপন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, “নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট একটি প্রতারক চক্র। অধিক মুনাফার প্রলোভন দিয়ে তারা অবৈধ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শত শত সাধারণ মানুষকে সর্বসান্ত্ব করছে। আমি তাদের এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছি।”

১৩ মে ২০১৪ :: স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এসআই হকনিউজরুম এডিটর/বিআই

About ইনফো ডেস্ক